সিআরবি নয়, সরকারি হাসপাতাল হোক উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে

আ.ফ.ম. মোদাচ্ছের আলী | মঙ্গলবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

সি আরবির হেরিটেজ ধ্বংস করে ধনী মানুষের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা না করার আন্দোলন যখন চলমান ঠিক তখনই আবার কোভিড হানা দিয়েছে। চট্টগ্রাম এখন কোভিড আক্রান্তদের লাল তালিকাভূক্ত শহর। স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ ‘চট্টগ্রামে প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে ২ জন আক্রান্ত। ইউনাইটেড কি বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতো? যা করছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতাল? চট্টগ্রামেও রেফারেল হাসপাতাল আছে যাদের কাজ হচ্ছে অন্য হাসপাতালগুলোকে রেফারেল সুবিধা দেয়া, তারা কি তা করছে? ইউনাইটেড হসপিটালও একটি রেফারেল হাসপাতাল। সরকার এস আর ও নং ১৩৩/আইন/ ২০০৫/২০৬৯/শুলক তারিখ ০২/৬/২০০৫ এর মাধ্যমে ২৫১টি মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কোটি কোটি টাকা শুল্ক মওকুফ করে এই রেফারেল হাসপাতাল সমূহকে আমদানির সুবিধা দিয়েছে এবং সেই সুবিধা নিয়ে তারা কি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে আছে? ওইসব হাসপাতালের দোরগোড়ায় তো ওরা ঢুকতেই পারেনা। এমতাবস্থায় বাস্তবতার নিরিখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ইউনাইটেড নয় উওর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে দুটি পৃথক ৫০০ শয্যার ও ১০০ ছাত্রের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন প্রাসঙ্গিক তা পাঠকের জন্য তুলে ধরছি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত ৪১টি ওয়ার্ড। উইকিপিডিয়ার তথ্যসূত্র অনুযায়ী এই ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম শহরে জনসংখ্যা ছিল ৮৭ লক্ষের বেশি। জাতীয় তথ্য বাতায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পেইজে জনসংখ্যার তথ্য দেয়া হয়েছে ৬০ লক্ষেরও বেশি (ভাসমান মানুষ ছাড়া)। নিউজ ২৪ এর অনলাইন সংবাদ এর তথ্য অনুসারে ১৬ জুলাই ২০১২ তারিখে চট্টগ্রাম এর সেই সময়ের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যা ৮০ লক্ষ ২১ হাজার ৭৭৮ জন, প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ১ হাজার ৪৭২জন। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী শহরে প্রতি বছর এক বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক লক্ষ। সেই হিসেবে ২০১৮ – ২০২১ এই ৪ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে আরো ৪ লক্ষ। তাইলে এইসময়ে মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় শহরে ৮৪ লক্ষ, যদিও সঠিক হিসাব করলে তা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে উওর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম মিলিয়ে মোট ১৫ টি উপজেলা। উইকিপিডিয়ায় ১৯৯১- ২০১১ পর্যন্ত এই ১৫ টি উপজেলায় আদমশুমারী রিপোর্ট অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৪৫ লক্ষ ৮ হাজার ৩৬৭। শুধুমাত্র সীতাকুণ্ড উপজেলার তথ্য ছিল ২০১৮ সালের। ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যদি এক লক্ষ করে হলেও যদি ধরি তাইলে ১৫ উপজেলায় বৃদ্ধির হার ১৫ লক্ষ যদিও এর সংখ্যা আরো বেশি। ফলে ১৫ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ লক্ষেরও বেশি। এবার ৮৫ লক্ষ জনসংখ্যার শহরে সরকারি হাসপাতাল এর চিত্র তুলে ধরছি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ১৩১৩ (পেয়িং বেড সহ), চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ২৫০টি। এর সাথে উওর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম এর ৫০ / ৬০ লক্ষ মানুষ যুক্ত হলে কি দাড়ায় পাঠক নিজেই বুঝতে পারেন। উল্লেখ্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে। ২০১১ সালের আদমশুমারীর তথ্যের ভিত্তি অনুযায়ী বৃহত্তর ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ১ কোট ৭০ লক্ষ বর্তমানে প্রায় দুই কোটিরও বেশি। এই শহরে ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেড সংখ্যা ৬০০, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এর বেড সংখ্যা ৮৭৫টি, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেড সংখ্যা ৫০০টি এবং ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেড সংখ্যা ১৭০০টি। অর্থাৎ সর্বমোট ২৮০০ বেড এর সরকারি হাসপাতাল শুধু ঢাকা শহরের জন্য এবং চট্টগ্রাম শহরের সরকারি হাসপাতাল এর বেড সংখ্যা ১৫৬৩ টি। এছাড়া ঢাকা শহরে রয়েছে বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল, যেমন পঙ্গু হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ চট্টগ্রামে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ৫ বছরের বেশি সময় পার হলেও এর অবকাঠামোই এখন তৈরি হয়নি।
এবার উওর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে দুইটি পৃথক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা কেন প্রাসঙ্গিক তা পাঠক কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারছেন। কক্সবাজারের জন্য আছে পৃথক সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় আছে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অথচ প্রায় ৬০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে ছুটতে হয় চট্টগ্রাম শহরের সরকারি হাসপাতালে যা শহরের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা দিতে অপারগ। আর সিআরবিতে যদি ইউনাইটেড হয় সেখানকার ফ্রন্ট ডেস্কের প্রাথমিক অর্থ জমা দেয়ার সাধ্য কি আছে প্রান্তিক মানুষগুলো। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কমিটি করেন চট্টগ্রাম মহানগর, উওর জেলা ও দক্ষিণ জেলা কমিটি। সেটি নিশ্চয়ই জনসংখ্যার কারণেই? তাইলে স্বাস্থ্যসেবার জন্য দুই জেলায় পৃথক সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কেন নয়?
বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈসম্য দূর করার জন্য বাঙালি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া এই চাহিদার একটি। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা এই বিষয়টির দিকে নজর দেবেন এটি আজ চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা। সিআরবির হেরিটেজ ধ্বংস করে বেসরকারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হসপিটাল না করে উওর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোটি মানুষের জন্য পৃথক দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবী।
লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসলামে কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ প্রদানের গুরুত্ব ও ফজিলত
পরবর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল