‘সিআরবি আমার মা বিক্রি করতে দেব না’

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

লাল সবুজে বলীয়ান জনতা কাল স্লোগানে স্লোগানে জানান দিয়েছে ‘সিআরবি আমার মা, বিক্রি করতে দেব না’। সাথে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছেন, ‘নষ্ট করলে খবর আছে, কইরা দেখিস করি কী, যেমন আছে তেমন রবে সিআরবি’। উপস্থিত নানা শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শপথ নিয়েছে, যতদিন পর্যন্ত সিআরবি থেকে হাসপাতাল প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেয়া না হবে, ততদিন এ সিআরবিই হবে তাদের আপন ঠিকানা।
নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে সিআরবি রক্ষায় প্রতিবাদী সমাবেশের সূচনা হয় উদীচী, চট্টগ্রাম জেলা সংসদের শিল্পীরা গীতিনাট্য ‘ইতিহাস কথা কও’ পরিবেশনের মাধ্যমে। নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তারা জানায়, বিপ্লবের রঙ লাল, চেতনার রঙ সবুজ। চেতনায় নিত্য চষে বেড়ায় মা মাটি আর মাতৃভূমির প্রতি প্রেম। কানে বাজে দ্রোহের সুর। বিপ্লবের রক্তিমাভা সাহস যোগায়, ঘৃণ্য অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন শপথে বলীয়ান করে তুলে। সিআরবিকে বিক্রি করে দিতে যে অপশক্তি মাঠে নেমেছে, তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তারা বলে, ‘এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে, এ লড়াই মরণ জয়ী করতে হবে’।
নির্দিষ্ট সময় বিকেল চারটার আগেই আসতে থাকে মানুষ সিআরবিতে। চারটা পেরুতেই বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের মিছিল জড়ো হতে থাকে সমাবেশ স্থলে। জনতার বাঁধ ভাঙা স্রোতে তখন উত্তাল সিআরবি। সকলের দাবি একটাই, প্রয়োজনে রক্ত দেবো, তবু হেরিটেজ খ্যাত সিআরবির কোনো গাছে হাত লাগাতে দেবো না। উদীচীর পরিবেশনা শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এলাকা সিআরবি। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়, ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ এই সিআরবি। শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের মধ্য দিয়ে পুরো জায়গাটিকে আত্মসাৎ করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বক্তারা বলেন, সিআরবি সিআরবি-ই থাকবে। সিআরবিকে আমাদের থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। প্রাণের ফুসফুস সিআরবিতে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে দেবো না। এখানে এমন হাসপাতাল করতে চাইছে তারা, যেখানে খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেণী মেহনতি মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে না। তারা এমন হাসপাতাল করতে চাইছে, যেখানে মৃতদেহ আটকে রেখে দশ লাখ বিশ লাখ টাকা আদায় করা যায়, আর এই শ্রমিক শ্রেণীকে পড়ে থাকতে হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেঝেতে। প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংস করে আমরা এমন হাসপাতাল হতে দেব না।
নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের কো চেয়ারম্যান রাজনীতিক মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তি শিল্পী প্রণব চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের কো চেয়ারম্যান ডা. ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, মহানগর আত্তয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মদ ইউনুস, প্রকৌশলী মো. হারুন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের চেয়্যারম্যান প্রকৌশলী প্রবীর সেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, সংস্কৃতি সংগঠক ডা. চন্দন দাশ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন রাসেল, অধ্যাপক ওমর ফারুখ রাসেল, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, লায়লা আক্তার এটলী, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, যুবলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু, শিবু প্রসাদ, শ্রমিক নেতা গাজী জসীম উদ্দীন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হোসাইন কবির, একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, শিক্ষক নেতা বশীর উদ্দীন কনক, শ্রমিক নেতা আব্দুল আহাদ, সাবেক ছাত্রনেতা শাহাজাহান চৌধুরী, আবৃত্তিকার রাশেদ হাসান, স্বপন মজুমদার, আত্তয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা জসীম উদ্দীন বাবুল, ন্যাপ নেতা বাপন দাশগুপ্ত, বোধন আবৃত্তি সংসদের সভাপতি আব্দুল হালিম দোভাষ, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর যুগ্ম সম্পাদক মোরশেদ আলম চৌধুরী, মহিলা আত্তয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা আক্তার টুনু, জেনিফার আলম, শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন জিকু প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবে-টার্মিনাল চালু হলে গতিশীল হবে অর্থনীতি
পরবর্তী নিবন্ধইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা