চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও এমপিদের ধন্যবাদ জানাই

‘সিআরবিতে হাসপাতাল নয়’

| বৃহস্পতিবার , ১৮ আগস্ট, ২০২২ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও এমপিদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি আমরা। চট্টগ্রামের সামগ্রিক স্বার্থে তাঁরা এক হয়ে বলেছেন, ‘সিআরবি বাঁচুক, হাসপাতাল হোক অন্যত্র’। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন এবং সর্বস্তরের মানুষের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস কালচারাল হেরিটেজ সিআরবিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি স্থগিতের জন্য রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনকে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। নেতৃবৃন্দ হাসপাতালটি রেলের অন্য জায়গায় নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নেরও অনুরোধ জানান রেলমন্ত্রীকে। দৈনিক আজাদীতে গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবকখ্যাত সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির নেতৃত্বে চট্টগ্রামের দুই মন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে চিঠিটি হস্তান্তর করেন। এ সময় তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন। চিঠিতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি, মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি স্বাক্ষর করেছেন। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকায় পিপিপির আওতায় হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ায় রেলমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অভিনন্দন জানান বর্তমান ও সাবেক তিন মন্ত্রী।
এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছেন চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ। তাঁরা বলেছেন, ‘অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর সিআরবি ভবনটি হয় ১৮৯৫ সালে। শতবর্ষী বৃক্ষসমৃদ্ধ পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এলাকাটি জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আশপাশের পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর আবাস। শিরীষ গাছের তলায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান; বসে মেলা, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বলীখেলা। সড়কের বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং রাস্তাটির দুই পাশের প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার একতলা সেমিপাকা) নিয়ে ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। উঁচু দালান আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইট-পাথরের শহরে শতবর্ষী বৃক্ষে ঘেরা সিআরবিকে এক টুকরো অঙিজেন প্ল্যান্ট বলা চলে। পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করতে গেলে শতবর্ষী অনেক গাছ কাটা পড়ার পাশাপাশি এখানকার সবুজ নিসর্গ ধ্বংস হয়ে যাবে। হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রবের কবর, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। মুক্তিযুদ্ধে এই সিআরবিতে অনেকে শহীদ হয়েছেন। রেলের অনেক শ্রমিক কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এই সিআরবি তথা পাহাড়তলী ছিল বিপ্লবের সূতিকাগার। সেই সব স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহীদের কবর, শহীদের নামে কলোনি, শহীদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে।’
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের এই উদ্যোগকে আমরা অভিনন্দিত করছি। তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সিআরবি ভবনটি শুধু চট্টগ্রামে নয়, পুরো দেশের মধ্যে স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। এখানে শতবর্ষী অসংখ্য বৃক্ষ রয়েছে। এখানে হাসপাতাল হলে প্রকৃতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। এজন্য আমরা সিআরবি থেকে হাসপাতালটি রেলের অন্য জায়গায় স্থানান্তরের জন্য বলেছি। হাসপাতাল হবে, তবে সেটা অন্য জায়গায়। রেলমন্ত্রী এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সিআরবিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কোনো সুযোগ নেই। পিপিপির আওতায় হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি সিআরবি থেকে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়ায় রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, মাননীয় মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, স্থানীয় জনগণের মাঝে সিআরবিতে হাসপাতাল র্নির্মাণ প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের প্রত্যাশার বিষয়টি জানানো উচিত। তাই আমরা বিষয়টি রেলমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করেছি। মন্ত্রী মহোদয়ও বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন। তিনি আমাদেরকে বলেছেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে বন্দরনগরীর ফুসফুস খ্যাত চিরসবুজ সিআরবিতে শুধু হাসপাতাল নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা করা সমীচীন হবে না। প্রকৃতি ও পরিবেশবিনাশী সব কর্মকাণ্ডই হবে আত্মবিধ্বংসী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে