সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে সংশয়ের অবসান হওয়া দরকার

| বুধবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে বিতর্কের অবসান হওয়া দরকার। চট্টগ্রামের নানা শ্রেণির মানুষ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন। এই বিরোধিতার কারণে আটকে আছে সেই প্রকল্প। কিছুদিন পর পর ওখানে সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা মন্ত্রী আসেন, বক্তব্য দিয়ে যান। তাতে আবার সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটির কী দশা হবে-কেউ তা জানে না। সবাই আছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তবে তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা সিআরবিতে হাসপাতাল না চাইলে প্রধানমন্ত্রীও মত দেবেন না। তিনি বলেন, প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায়। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তক্রমে যেহেতু হয়েছে, তাই রেল মন্ত্রণালয়ের ভিন্নমত থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা অথরিটি না। পিপিপির বিষয়ে একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি অথরিটি আছে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে সিআরবিতে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তারপরও এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী হবে। মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি বলেছিলেন ‘চট্টগ্রামের মানুষ না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না’। এখন আপনার বক্তব্য কী? চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের দাবি বঙ্গমাতার নামে হাসপাতাল না করে উদ্যান করা হোক-এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যা কিছু হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়েই করতে হবে। এটা তো আমরা চট্টগ্রামের জনগণের জন্যই করছি। এখন চট্টগ্রামের জনগণ চান কি চান না এই বক্তব্য তো আপেক্ষিক। আমি বললাম যে, আমি চিটাগাংয়ের জনগণের কথা বলছি। আমি চিটাগাংয়ের কত পারসেন্ট লোকের রিপ্রেজেন্ট করি, এগুলোও তো প্রশ্ন আসে। চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিনিধি তো এখানকার মন্ত্রী-এমপিরা আছেন। উনারা যদি না চান, তাহলে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী উনাদের বিরুদ্ধে যাবেন না। আমরাও কি বিরুদ্ধে যাব? আমাদের দরকার কি? আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের যে নীতি, ৩০ শতাংশ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে পিপিপির মাধ্যমে। এখানে একটা কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে; প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। সিআরবির প্রকল্পটাও ইনিশিয়েট করে ওখান থেকে মোটামুটিভাবে যখন মাঠ পর্যায়ে গেছে, তখন কিন্তু অভিযোগ পাল্টা অভিযোগগুলো আসছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ এবং জনগণের চলাচল বন্ধ করতে প্রবেশপথে গেট নির্মাণের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এমপি। ইতোপূর্বে হেরিটেজ জোন হিসেবে স্বীকৃত এবং শহীদ আবদুর রবসহ আটজন শহীদের কবরের উপর সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে তিনি বিদেশ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন। গত শুক্রবার নগরীর নন্দনকানন বাসভবনে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে তার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে চার ভাগের এক ভাগ জমি রেলওয়ের। আমি চট্টগ্রামে হাসপাতাল চাই। কিন্তু সেটি সিআরবিতে হতে হবে কেন? এই হাসপাতালটি রেলওয়ের অন্য জায়গায় করতে পারে, এখানে যে হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। একটা পত্রিকায় দেখেছিলাম সিআরবির প্রবেশমুখে গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। এটা হতে পারে না। আমরা চট্টগ্রামের ছেলে। আমরা ছোট থাকতে সিআরবিতে খেলতে যেতাম, ঘুরতে যেতাম। সিআরবির চতুর্পাশে যাতায়াতের অনেক পথ। কতগুলো গেট করবে তারা? এটা কিন্তু উচিত হচ্ছে না।
সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এমপি’র মতো যদি চট্টগ্রামের অন্য এমপিরা এভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এ থেকে একটা পরিষ্কার ধারণা পেতে পারেন। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়ন হোক-সেটা চায় সকলেই। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সিআরবিতে হাসপাতাল চায় না। এই বোধটুকু সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনের ভেতরে আসুক, সেটাই আমরা চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে