চট্টগ্রাম শহরের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল বা বাণিজ্যিক স্থাপনা করার কোনো সুযোগ নেই। বাটালী হিল থেকে শুরু করে সিআরবি পর্যন্ত এলাকা ‘হেরিটেজ জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। হেরিটেজ জোনে কোনো ভাবেই স্থাপনা করার অনুমোদন দেয়ার সুযোগ নেই। রেলওয়ে তাদের স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে সিডিএ থেকে অনুমোদন নেয় না, স্থাপত্য অধিদপ্তরের চিফ আর্কিটেক্ট থেকে নিয়ে থাকে। কিন্তু চিফ আর্কিটেক্ট অনুমোদন দেয়ার আগে সিডিএ থেকে লিখিতভাবে মতামত নেন। সিআরবি’র ব্যাপারে সিডিএ থেকে কোনো ধরনের লিখিত অনুমোদন দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি এলাকায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কোম্পানিকে সিআরবি এলাকার ছয় একর জায়গা প্রদান করা হচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানিটি প্রায় চারশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো গড়ে তুলবে। বিদ্যমান রেলওয়ে হাসপাতালসহ পাশের ছয় একর জায়গার উপর আগামী ১২ বছরে ইউনাইটেড প্রকল্পটটি বাস্তবায়ন করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিঃ প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) (পূর্ব) এবং এই প্রকল্পটির পরিচালক মোহাম্মদ আহসান জাবির বলেছেন, ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল কেবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক (সিসিইএ) কর্তৃক অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এবং ১০০ আসন বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত বছরের ১৮ মার্চ সম্পাদিত ওই চুক্তি মোতাবেক ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে হাসপাতালটি নির্মাণ করবে। তিনি বলেন, সিআরবি রেলওয়ের নিজস্ব হাসপাতালের পার্শ্বে গোয়ালপাড়া এলাকায় সর্বমোট ছয় একর জায়গা প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে।
সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগে ফুঁসে উঠেছে চট্টগ্রামের মানুষ। চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত এই এলাকায় কোনোভাবেই হাসপাতাল করতে না দেয়ার ব্যাপারে চট্টগ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা না করে স্থান নির্ধারণ ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। তারা সিআরবির পরিবর্তে চট্টগ্রামের যে কোনো স্থানে হাসপাতাল হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন।
সূত্র বলেছে, সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কোনো সুযোগই আইনেও নেই। প্রচলিত আইন মানা হলে সিআরবিতে শুধু হাসপাতালই নয় কোনো ধরনের স্থাপনাই গড়ে তোলার সুযোগ নেই। দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ডিএপি) এবং মাস্টার প্ল্যান পরীক্ষা করে দেখা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নের ব্যাপারে প্রচলিত এই দুইটি আইনে বাটালী হিল থেকে সিআরবি পর্যন্ত এলাকাটি হেরিটেজ জোন হিসেবে চিহ্নিত। এখানে এই ধরনের কোনো স্থাপনা করার আইনি অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ শহরের এই বিস্তৃত এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দেয়ারই সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেছেন, রেলওয়ে এবং বন্দর নিজেদের জায়গায় কোনো ধরনের স্থাপনা করতে সিডিএ থেকে অনুমোদন নেয় না। তারা স্থাপত্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো ধরনের অনুমোদন দেয়া হবে না বলে উল্লেখ করে বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালসহ অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে সিডিএ থেকে অনুমোদন না নিলেও স্থাপত্য অধিদপ্তরের চিফ আর্কিটেক্টের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়। স্থাপত্য অধিদপ্তরের চিফ আর্কিটেক্ট যে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার আগে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে লিখিত মতামত নিয়ে থাকেন। চট্টগ্রামে সরকারি কোনো সংস্থার অবকাঠামোর ব্যাপারে সিডিএর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেয় স্থাপত্য অধিদপ্তর। এই হাসপাতালের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রেও অবশ্যই সিডিএ থেকে মতামত চাওয়া হবে। সিডিএ এই হাসপাতালের অনুমোদন দেবে না বলে উল্লেখ করে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ডিএপি এবং মাস্টারপ্ল্যানের শর্তানুযায়ী সিআরবি এলাকায় কোনো অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দেয়ার সুযোগ সিডিএর নেই। সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, ‘আমাদের মাস্টারপ্ল্যান এবং শহরের ডিটেইলস এরিয়া প্ল্যানে এটি হেরিটেজ জোন হিসেবে আছে। সংরক্ষিত এলাকা।’ সংরক্ষিত এলাকায় কমার্শিয়াল কিছু করার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এটা নগরীর একটা নান্দনিক স্থান, যেখানে সবাই যেতে পারে। ডিসি হিলে আগে যাওয়া যেত, এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। সিআরবি সারাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি নান্দনিক স্থান হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহরে আর কোনো ওপেন স্পেস নেই। আগে সার্কিট হাউজের সামনে খোলা জায়গা ছিল, সেখানে পার্ক হয়েছে। আউটার স্টেডিয়ামেরও একই দশা। শহরের মানুষের প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার একটি জায়গা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রামে হাসপাতাল গড়ার মতো বহু জায়গা রয়েছে বলে উল্লেখ করে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমাদের কাছে আসুক, আমরা জায়গা দেখিয়ে দেবো। কিন্তু সিআরবিতে হাসপাতাল করার সুযোগ নেই। পাহাড়তলীতে রেলের অনেক জায়গা আছে বলে উল্লেখ করে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ওখানের রোড নেটওয়ার্ক অনেক ভালো। আউটার রিং রোডের পাশেও বহু জায়গা আছে। চট্টগ্রামে হাসপাতাল করার জায়গার অভাব নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে আসলে আমরা সব ধরনের সহায়তা করবো, তবে সিআরবিতে হাসপাতালের কোনো অনুমোদন আমরা দেব না।