সিআরবিতে বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে রেল কর্তৃপক্ষের বাধা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর সিআরবিতে প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে বাধা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিআরবির শিরীষতলায় উৎসবে বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাক্‌বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় অনুষ্ঠানে আসা দর্শনার্থীরাও ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ওপর। তারা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানান। সংস্কৃতিসেবীরা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, আমাদের চেতনায় ভাস্বর মাতৃভাষার আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছেছিল এই কৃষ্ণচূড়া-পলাশ ফোটার বসন্তকালে। গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব অসহযোগ আন্দোলনও দানা বেঁধেছিল বসন্ত ঋতুতে। স্বাধীন বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের দাবিতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বার বার পথ খুঁজে পেয়েছে বসন্তকালে। এমন আয়োজনে বাধা দেওয়া কারও কাম্য নয়। তারা আরো বলেন, সুকৌশলে একটি চক্র সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে চট্টগ্রামে সংস্কৃতি চর্চার স্থানগুলো একে একে কেড়ে নিচ্ছে। ডিসি হিল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ সিআরবির উপরও আঘাত এসেছে। এর নেপথ্যে কারা আছেন তা খুঁজে বের করতে হবে সরকারকেই। প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান আজাদীকে বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিরীষতলায় প্রমার বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান করতে অনুমতি নেওয়া হয়। তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করতে অনুমতি দেয়। তবে শর্ত দেয়, উচ্চস্বরে গান-বাজনা করা যাবে না। রাশেদ হাসান বলেন, আজ বসন্ত বরণ উৎসব। এখানে গান-বাজনা হবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এটি প্রতিবছর আমরা করে আসছি। কিন্তু আজ (১৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠান শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়েলফেয়ার পরিদর্শক রুবাইত হোসেন এসে বাধা দেন।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়েলফেয়ার পরিদর্শক রুবাইত হোসেন অনেকটা কর্তৃপক্ষের ঢংয়েই শব্দ যন্ত্রানুষঙ্গ নিজেই খুলে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর ভাষা ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আগামীবার থেকে এখানে কী করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয় দেখে নেব। কিন্তু উৎসব হবে, অথচ গান বাজনা হবে না; এটা কী ধরনের শর্ত জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেন নি। সকলের ক্ষোভের মুখে একপর্যায়ে তিনি বলেন, আমাকে জোবেদা ম্যাডাম (জোবেদা আক্তার, এজিএম, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল) পাঠিয়েছেন। আপনারা তাঁর সাথে কথা বলুন। পরে অবশ্য তিনি ক্ষমা চেয়ে স্থান ত্যাগ করেন।

পরে বিকেলে উপ মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, মৌলবাদী চিন্তাধারা সমাজ প্রগতির পথে বড় বাধা। মৌলবাদী ধ্যানধারণা থেকে উত্তরণের জন্য শিল্পসংস্কৃতির চর্চা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। উন্মুক্ত পরিবেশেই সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করবেন। এই চট্টগ্রাম ছিল সংস্কৃতির লীলাভূমি। এখানে বাঙালি সংস্কৃতি গানবাজনা, নৃত্য, কবিতা, নাটক সবকিছুর চর্চা হবে। অসামপ্রদায়িক বাংলার সাংস্কৃতিক সব উপাদান, আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে এখনো সেই কুপমন্ডুকতা, এখনো সেই সামপ্রদায়িকতা, এখনো সেই পশ্চাদপদ মানসিকতা আছে। সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়েই সেই মানসিকতাকে পরাভূত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবসন্তের রঙে ভালোবাসায় আবিষ্ট নগর
পরবর্তী নিবন্ধকাউন্সিলরে কে কত ভোট পেলেন