সিআইডিও বলছে দিয়াজের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা

প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন জমা, নারাজি দেবেন বড় বোন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

ছয়টি বছর পেরিয়ে গেছে, তদন্ত সংস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদন একই রয়ে গেছে। পুলিশের মতো সিআইডিও বলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী আত্মহত্যা করেছেন।

তাকে হত্যার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সিআইডি। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রসিকিউশন শাখার পরিদর্শক জাকির হোসেন মাহমুদ আজাদীকে জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মিয়া এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। আগামী সপ্তাহে তা আদালতে উত্থাপন করা হবে।

সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার আসামি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, চবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ, সিনিয়র সহ সভাপতি মনসুর আলম, সহ সভাপতি আবদুল মালেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরমান, প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম জিসান ও আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও আরিফুল হক অপুর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে কী আছে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম) শাহনেওয়াজ খালেদ আজাদীকে বলেন, আমাদের তদন্তে পাওয়া গেছে, দিয়াজ আত্মহত্যাই করেছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়নি।

এ বিষয়ে দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জোবাইদা সরোয়ার নিপা বলেন, এটির বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা নারাজি পিটিশন দাখিল করব।

এদিকে সিআইডির দেওয়া ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ প্রত্যাখ্যান করে তার মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বার্তা সংস্থা বিডিনিউজকে বলেছেন, তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা ‘প্রভাবিত হয়ে’ এমন প্রতিবেদন দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে বাদী হিসেবে তার সঙ্গেও কথা বলেনি সিআইডি, অথচ মামলার এক আসামি ফেইসবুকে ওই খবর জানিয়েছে।

এরআগে ২০২১ সালেও মামলার তদন্ত ‘প্রভাবিত’ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন জাহেদা আমিন চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দিয়াজের মৃত্যুর তিন দিন পর ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ।

তবে প্রথম থেকেই দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা অভিযোগ করে আসছে যে, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করার কোনও কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে তারা। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন। আসামিরা সবাই চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দিয়াজও নাছিরের অনুসারী ছিলেন। তখন দিয়াজের মায়ের আপত্তিতে আদালত দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। এজন্য তখন তারা দিয়াজের লাশ উত্তোলন করেন কবর থেকে।

২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দেওয়া দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তারা বলেন, দিয়াজের শরীরে হত্যার আলামত রয়েছে। ওই প্রতিবেদনের পর দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যা মামলা হিসেবে নিতে হাটহাজারী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নিজেই সেটির তদন্ত শুরু করেন। পরে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির কাছে। সিআইডির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার অহিদুর রহমান তদন্ত শুরুর পর বদলি হন। এরপর আরও দু’জন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন। অবশেষে সিআইডি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মিয়া মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়া উর্দু-অঙ্কে পাস, বাংলায় ফেল : হাছান মাহমুদ
পরবর্তী নিবন্ধঐতিহ্য ফিরবে আউটার স্টেডিয়ামের