সায়েমের জ্ঞান ফিরল সাত দিন পর, মামুনেরও উন্নতির দিকে

চবি এলাকায় সংঘর্ষ

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে গুরুতর আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সাত দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত শনিবার জ্ঞান ফিরেছে তার। মাবাবা বলে ডাক দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে সংঘর্ষে আহত সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের অবস্থাও ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার মাথায় খুলি এখনো জোড়া লাগেনি। ব্রেনের অংশে অপারেশন করায় আপাতত খুলি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। একদুই মাস পর বা অবস্থার উন্নতি হলে খুলি আবার লাগানো হবে।

গতকাল নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শনিবার সোয়া ১১টা থেকে ১২টা ৪৫ পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ধরে স্যাররা রিসার্চ করেছেন। রোগী আগের চেয়ে ইম্প্রুভ করেছে। তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। এটাও আগের চেয়ে ভালো আছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে স্যাররা উপস্থিত থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়েছেন। এটি খোলার পর সে ভালোই রেসপন্স করছে, নিজে নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে। লাইফ সাপোর্ট খোলার আগে জ্ঞানের লেভেল ছিল ৮। এখন এটা আরো বাড়বে।

তিনি বলেন, সে তার মাবাবার সঙ্গে মোটামুটি হালকা কথাবার্তা বলতে পারছে। সে মাবাবা ও ভাইকে ডেকেছে। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত হলো, তারা আরো ২৪ ঘণ্টা অবজারভেশন করবে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে আর কিছু করার আছে কিনা।

জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সায়েমের মাথায় আঘাত করা হয়। শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সাত দিন ধরে অচেতন থাকার পর গতকাল কথা বলেছেন সায়েম। ডাক্তাররা জানান, শুরু থেকেই সায়েমের জ্ঞানের লেবেল ছিল ৫৬। আজ তা উন্নতি হয়ে ৮এর বেশি হয়েছে।

সায়েমের সঙ্গে হাসপাতালে থাকা সহপাঠী আশিকুর রহমান বলেন, সায়েমের অবস্থা আগের থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। সে মাবাবা বলে ডেকেছে, তবে চোখ খোলেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, সায়েমের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। শুনে অনেক ভালো লাগছে। মেডিকেল বোর্ড থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। দোয়া করি, আহত সবাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।

এদিকে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নাইমুলের সঙ্গে হাসপাতাল থাকা তার বড় বোন তানজিনা ইসলাম বলেন, নাইমুল ইসলাম এখন মোটামুটি সুস্থতার দিকে। তবে শঙ্কা এখনো কাটেনি। আমার ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। ডাক্তারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাকে জীবাণু থেকে নিরাপদে রাখতে, যাতে কোনোভাবে ইনফেকশন না হয়। নাইমুলের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে চারপাঁচ মাস লাগতে পারে। আর যদি কোনোভাবে হাতে ইনফেকশন হয়, তাহলে সেটা ভালো হতে ছয়সাত মাসের বেশি লাগবে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় একটি ভবনের ভাড়াটিয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে দারোয়ানের তর্কের জেরে গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য, প্রক্টরসহ আহত হন ৪২১ জন। গুরুতর আহত হন ছয় শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সবার অবস্থা উন্নতি হলেও সায়েমের অবস্থা স্থির ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচান্দগাঁওয়ে প্রবাসীকে ছুরিকাঘাতে খুন
পরবর্তী নিবন্ধব্লাড মুন দেখা গেল চট্টগ্রামের আকাশেও