সাড়ে ৯ লাখ টাকায় সার্ভিসিং মাস না যেতেই ফের অচল

চমেক হাসপাতালের দশ কোটি টাকার এমআরআই মেশিন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১০ জুন, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

পুরনো মেশিন অকেজো হয়ে পড়ায় ২০১৪ সাল থেকে দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় এমআরআই সেবা বন্ধ থাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। তবে ২০১৭ সালে চমেক হাসপাতালে নতুন একটি এমআরআই মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের (১.৫ টেসলা) নতুন এ মেশিনের মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেশিনটি সরবরাহ করে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের (আগের) পাশে নতুন কার্ডিওলজি ভবনের নিচতলায় নতুন ওই এমআরআই মেশিনটি বসানো হয়। যদিও মেশিনটি হাসপাতালের তিনতলার রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের অধীনে। ইনস্টলেশন শেষে ওই বছরের (২০১৭ সালের) ২৪ অক্টোবর এ মেশিনের সেবা উদ্বোধন করা হয়। তবে উদ্বোধন হলেও ফিল্মের অভাবে ওই সময় পুরোদমে মেশিনটির সেবা চালু করা যায়নি। পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে ফিল্ম ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে পুরোদমে এই মেশিনের সেবা চালু হয়। কিন্তু সেবা চালুর তিন বছর না যেতেই যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ২০২০ সালের অক্টোবরে অচল হয়ে পড়ে মেশিনটি। দীর্ঘ সময় ধরে এমআরই সেবা বন্ধ থাকে চমেক হাসপাতালে। কম খরচের এমআরআই সেবা থেকে বঞ্চিত হন গরীব ও অসহায় রোগীরা।
সর্বশেষ মাস খানেক আগে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডের লোকজন এসে সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে মেশিনটি সচল করে যান। আর মেশিনটি সার্ভিসিং বাবদ প্রতিষ্ঠানটি বিল দাবি করে সাড়ে ৯ লাখ টাকা। এরইমধ্যে ওই বিল ঢাকা থেকে অনুমোদনও করিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে বিল পরিশোধের আগেই ফের অকেজো হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার এই এমআরআই মেশিন। এতে আবারো বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের এমআরআই সেবা। প্রায় ১৫ দিন ধরে মেশিনটি অকেজা হয়ে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার। বিষয়টি হাসপাতাল প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- ফের অকেজো হয়ে পড়া এমআরআই মেশিনটি পর্যবেক্ষণে গতকাল বুধবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুনরায় হাসপাতালে আসেন। মেশিনটির কোন কোন অংশে ক্রটি এবং তা সারাতে কী কী প্রয়োজন, সেসব চিহ্নিত করে লিখিত ভাবেও জানিয়েছেন তারা। যদিও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মেশিনটি সচল করতে সক্ষম হবেন বলে হাসপাতাল প্রশাসনকে আশ্বস্ত করেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, মেশিনটি এর আগে অকেজা ছিল। মাত্র মাস খানেক আগেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন মেশিনটি সার্ভিসিং করে সচল করেছেন। এই সার্ভিসিং বাবদ তারা সাড়ে ৯ লাখ টাকা বিল করেছেন। ঢাকার নিমিইউ (ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ) এই বিল অনুমোদনও করেছে। কিন্তু অনুমোদন হলেও আমরা এখনো তাদের বিল পরিশোধ করিনি। এর মাঝেই জানতে পারলাম এমআরআই মেশিনটি পুনরায় অকেজো হয়ে আছে।
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে আমরা বলে দিয়েছি, মেশিনটি ঠিক করে না দিলে তাদের আগের বিল পাবেন না। কারণ, মেশিনটি তারা সার্ভিসিং করে গেছেন, এক মাসের বেশি হয়নি। এর মাঝেই মেশিনটি পুনরায় অকেজো হয়ে পড়েছে। তাই বলেছি, মেশিনটি ঠিক করে দিয়েই আগের বিল নিয়ে যাবেন। নয়তো বিল দেয়া হবে না। আজ (বুধবার) দেখলাম, ওনাদের লোকজন এসেছেন। তারা মেশিনটি দেখেছেন এবং খুব দ্রুততার সাথে সেটি সচল করে দেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমরাও আশা করছি, খুব কম সময়ের মধ্যে মেশিনটি পুনরায় সচল হবে।
এমআরআই কী ও কেন : চিকিৎসকরা বলছেন- এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিসোন্যান্স ইমেজিং) একটি ব্যথামুক্ত ইমেজিং টেস্ট। এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরকার (অর্গান, রক্তনালী ও টিস্যুর) স্পষ্ট ছবি নেয়া হয়। এটি নিখুঁত একটি পরীক্ষা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও যখন রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না, তখন চিকিৎসকরা এমআরআই টেস্ট করাতে বলেন।
চিকিৎসকদের মতে- এই এমআরআই টেস্টের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি টিস্যুর অবস্থা স্পষ্ট বুঝা সম্ভব। সাধারণত ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ডের অবস্থা বুঝার জন্য এই টেস্ট করা হয়। এছাড়া শরীরে কোনো টিউমার আছে কিনা, স্পোর্টস ইনজুরিতে লিগামেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত কিনা, দুর্ঘটনায় মাথায় ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছে কিনা, এসব বিষয় নির্ণয়ে এই এমআরআই টেস্ট করা হয়ে থাকে।
রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়- হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ক্ষেত্র বিশেষে তিন হাজার ও চার হাজার টাকা ফি দিতে হয় রোগীকে। যা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকার কম নয়। তবে গরীব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যেও এমআরআই সেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে চমেক হাসপাতালে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মাধ্যমে হাসপাতাল প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয় রোগীকে। হাসপাতাল প্রশসানের অনুমোদন সাপেক্ষে গরীব ও অসহায় পরিবারের রোগী বিনামূল্যে এই সেবা গ্রহনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। সত্যিকার অর্থে গরীব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে এ সেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হয়ে থাকে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিকে চমেক হাসপাতালে উন্নতমানের সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিনের সেবা চালু হয় ২০০৬ সালের ২৯ এপ্রিল। কিন্তু ২০১৪ সালের শেষদিকে দুটি মেশিনই অকেজো হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই মূলত কম খরচের ও বিনামূল্যের এমআরআই সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল বৃহত্তর চট্টগ্রামের গরীব ও অসহায় রোগীরা। তবে পরবর্তীতে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের উন্নতমানের জাপানি হিটাচি ব্রান্ডের এই নতুন মেশিনটি চমেক হাসপাতালকে বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যা ইনস্টলের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়। ওয়ারেন্টি সময়সীমা ৩ বছরের মধ্যে মেশিনটি অকেজো হলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সেটি নিজ দায়িত্বে সারানোর কথা। তবে এরই মাঝে মেশিনটির ওয়ারেন্টি সময়সীমা শেষ হয়েছে।
যার কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের মাধ্যমেই মেশিনটি সার্ভিসিং করাতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। যদিও সার্ভিসিং বাবদ ওই বিল পরিশোদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিইউ অ্যান্ড টিসি) থেকে অনুমোদন নিতে হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘরে বসেই অংশ নেয়া যাবে : ভূমিমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধনগরজুড়ে তীব্র যানজট, দুর্ভোগ