সাড়ে ৩ বছর ধরে বন্ধ শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র

নষ্ট জেনারেটর ও যান্ত্রিক ত্রুটি । ২০২৩ সালে যন্ত্রপাতি কেনার অনুমোদন হলেও এখনো কার্যকর হয়নি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

গ্যাস টারবাইনসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় সাড়ে তিন বছর বন্ধ রয়েছে পিডিবির শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নষ্ট জেনারেটরসহ গ্যাস টারবাইন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি গুলো আর মেরামতযোগ্য নয় বলে জানা গেছে। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর প্রায় ১০১১ বছর প্ল্যান্টটি ভালোভাবে চললেও ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়।

কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের কাছ থেকে জানা যায়, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জেনারেটরটি আগুনে জ্বলে নষ্ট হয়ে গেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেনারেটর, গ্যাস টারবাইনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটে গত সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

পিডিবির এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আর মেরামত যোগ্য নয়। এই কেন্দ্রের প্রায় যন্ত্রপাতি গুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। নিয়মিত মেরামত করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এটি মেরামত করে চালু করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই সরকারি ভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য ৯১ কোটি ৮৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৮৯ টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিলবিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ঢাকার জেঅ্যান্ডসি ইমপেক্সের কাছ থেকে শিকলবাহা পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস টারবাইন অংশের সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ সংগ্রহ, স্থাপন এবং বিশেষজ্ঞ সেবা নেবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯১ কোটি ৮৫ হাজার ৪৮৯ টাকা। মেরামতের ওই প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গ্যাস টারবাইনসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এরও প্রায় দেড় বছর আগে থেকে বন্ধ হয়ে আছে।

শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী পলাশ কান্তি বড়ুয়া জানান, গ্যাস টারবাইনসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ আছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১০ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। নষ্ট জেনারেটরটি মেরামত করতে অনেক টাকা লাগবে। মেরামত করতে যতটাকা লাগবেসেই টাকা দিয়ে নতুন জেনারেটর কেনা যাবে। তাই মেরামত না করে হয়তো নতুন করে ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে পিডিবির।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অবস্থান। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সাত কেন্দ্রের তিনটি গ্যাসভিত্তিক, দুটি পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, একটি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও একটি কম্বাইন্ড সাইকেল। যার উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট, এটিও শিকলবাহা একই এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো চলছিল জোড়াতালি দিয়ে। এর মধ্যে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিকলবাহার ১৫০ ও ৬০ মেগওয়াট এবং রাউজান ২১০ মেগাওয়াট করে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। শিকলবাহায় পিডিবির ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র শিকবাহা ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু আছে। এছাড়া ১৫০ পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি জেনারেটর ও গ্যাস টারবাইনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যন্ত্রপাতি প্রায় নষ্টের পথে। পিডিবি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

এই কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকসহ সকল কর্মচারীদের পার্শ্ববর্তী অন্য বিদ্যুকেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। শিকলবাহায় পিডিবির ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সচল রাখতে প্রয়োজন ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গত সাড়ে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোনো চাপের কাছে ইসি নতি স্বীকার করবে না : সিইসি
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬