সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে আগ্রহ আইএসডিবির

ইস্টার্ন রিফাইনারি দ্বিতীয় প্রকল্প সরকারের সাড়া, জানুয়ারিতে আসছে ব্যাংকের টেকনিক্যাল কমিটি, দেখবে প্রকল্প এলাকা আগামী জুনের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের বিষয় উভয় পক্ষ একমত

হাসান আকবর | শনিবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) সম্প্রসারণ প্রকল্পে ১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি)। ইতোমধ্যে সরকার এবং বিপিসির অর্থায়নে ‘ইআরএল ২’ নির্মাণ প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। বিদেশি অর্থায়নের প্রস্তাব প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গতি সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, আর্থিক সাশ্রয় এবং সর্বোপরি জ্বালানি পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় ২০১০ সালে। দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রতিকূলতায় ঝুলে থাকে গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ। ২০১৩ সালে সরকার ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজ শুরু হয়নি। পরে ২০২২ সালে বিপিসি নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০২৪ সালে এস আলম গ্রুপের প্রস্তাব ঘিরে আবার আলোচনা শুরু হয়। সরকার পতনের পর তা থেমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পটি নতুন করে সচল করা হয় এবং একাধিকবার ব্যয় ও অর্থায়ন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। সরকার এবং বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে ৩৫ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি অংশ ধরা হয়েছে ২১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং বিপিসির নিজস্ব অর্থ ১৪ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। সরকার ইতিপূর্বে বিভিন্নভাবে প্রকল্পটির জন্য বিদেশি ঋণের চেষ্টা করেও আশানুরূপ সাড়া পায়নি। কিন্তু গত ২২ ডিসেম্বর আইএসডিবি এক চিঠিতে এই প্রকল্পের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের আগ্রহের কথা জানায়। বাংলাদেশ সরকারও এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। গত বুধবার থেকে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আগামী বছরের জুনের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তার আগে জানুয়ারিতে আইএসডিবির একটি টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশ সফর করবে। প্রতিনিধিদলটি সরেজমিনে ইস্টার্ন রিফাইনারি পরিদর্শন করবে। পরবর্তীতে ঋণের শর্ত ও প্রকল্পের বিভিন্ন দিক চূড়ান্ত করা হবে।

আইএসডিবি এক বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে তারা আরো অর্থায়নের আভাস দিয়ে রেখেছে। সূত্র বলেছে, আইএসডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হলে প্রকল্পটির অর্থায়ন কাঠামো পরিবর্তন করে নতুন করে একনেকে উপস্থাপন করা হবে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আইএসডিবির ঢাকা ও মালদ্বীপ অঞ্চলের প্রধান মুহাম্মদ নসি বুলাইমান ইআরডি সচিবকে পাঠানো চিঠিতে প্রকল্পে সহায়তার এই আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। ব্যাংকটির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২.৮৯৪ বিলিয়ন ডলার। এর একটি অংশ হিসেবে এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি কোফাইন্যান্সিংয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। যদিও চিঠিতে এটিকে ননবাইন্ডিং বলা হয়েছে, তবু কর্মকর্তারা মনে করছেন, চূড়ান্ত হলে এটি আইএসডিবির ইতিহাসে অন্যতম বড় ঋণচুক্তি হতে পারে।

বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ৭০ লাখ টন জ্বালানি চাহিদা রয়েছে। ইআরএল বছরে মাত্র ১৫ লাখ বা চাহিদার একপঞ্চমাংশ পরিশোধন করতে পারে। বাকি তেল পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়, যেখানে বিপিসির কোটি কোটি ডলার বাড়তি খরচ করতে হয়। ইআরএল২ চালু হলে বছরে ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের সক্ষমতা যুক্ত হবে এবং ইউরো৫ মানের পরিবেশবান্ধব পেট্রোল, ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হবে। এতে বছরে বিপিসির কয়েক কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে। ইআরএল২ বাস্তবায়িত হলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় নয়, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাও উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিপাকে বিএনপি
পরবর্তী নিবন্ধ১৮ বছর পর বাবার কবরের পাশে তারেক