সাড়ে আট বছরেও শুরু হয়নি লালচাঁন্দ রোডের কাজ

চসিকের কাছে ব্যাখ্যা তলব মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

অনুমোদনের সাড়ে আট বছরেও শুরু হয়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত ‘চকবাজারস্থ লালচাঁন্দ রোড সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ। অথচ প্রকল্পটির বিপরীতে ২০১২ থেকে থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার কিস্তিতে ১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। এছাড়া চার দফা প্রকল্পের মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়ার পরেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না করায় চসিকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে মন্ত্রণালয়। অবশ্য চসিকের দাবি, প্রকল্পটির প্রধান কাজ ভূমি অধিগ্রহণ। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন কিস্তিতে জেলা প্রশাসনের এল.এ শাখায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা জমা দেয় চসিক। কিন্তু এখনো তারা ভূমি বুঝিয়ে দেয় নি। তাই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চসিকের প্রধান নির্বাহীকে দেয়া এক পত্রে বলা হয়, চসিকের প্রেরিত প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন (পিসিআর) সরাসরি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমডি) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এতে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত প্রকল্পে বিভিন্ন অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দকৃত অর্থ অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু কোন কাজ করা হয় নি। যেহেতু প্রকল্পে কোন কাজ করা হয় নি তাই প্রকল্পটি পিসিআর হবে না মনে করে আইএমডি। প্রকল্পের অনুকূলে জেলা প্রশাসক বরাবর বিভিন্ন সময়ে ভূমি অধিগ্রহণে যে অর্থ হাস্তান্তর করা হয়েছে তা ফেরত এনে সরকারি কোষাগারে জমা করার জন্য আইএমডি অনুরোধ করে’। আইএমডি’র সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে চসিকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, টাকা পরিশোধ করার পরও জেলা প্রশাসন ভূমি বুঝিয়ে দেয়নি। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। ডিসি অফিসের সাথেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছি। যেহেতু এখন মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন তাই আশা করছি ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা কেটে যাবে।
প্রকল্প পরিচালক ও চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোছাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভূমি বুঝে ফেলে সম্প্রসারণ কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না। মাসখানের মধ্যেই শেষ করা যাবে।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল অনুমোদিত প্রকল্পটির আওতায় লালচাঁন্দ সড়কের প্রশস্ততা ২০ ফুট থেকে ৪০ ফুটে উন্নীত করার কথা ছিল। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২১ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি ফান্ড থেকে ১৯ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয় করার কথা।
অনুমোদনকালে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। ওই মেয়াদে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুলতার কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয় নি। পরবর্তীতে চসিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়িয়ে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় ২০১৫ সালের জুন এবং চতুর্থ দফায় ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
প্রকল্পটির আওতায় ৭০ দশমিক ৩২ ডেসিমেল ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট ভবনের ক্ষতিপূরণ খাতে ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ৪৫৭ মিটার রাস্তা নির্মাণে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৪৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণে ৯৫ লাখ টাকা এবং ৯১৪ মিটার ফুটপাত নির্মাণে ৬৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিতা সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার একটি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। নগরায়নের সাথে উক্ত এলাকার জনবসতি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যাও অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন স্কুল-কলেজ বৃদ্ধি পাওয়ায় এলকাটিতে প্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজট নিরসনের উদ্দেশে চসিক লালচাঁন্দ রোড সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের স্ত্রীরও করোনা শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধমাহী বি ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চায় দুদক