লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় খরচবাবদ তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী মামলাটি করেন বলে কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
সাহেদ ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম। মামলার বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদেরকে আসামি করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর আবার রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের খবর পেয়ে র্যাব গত ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয়। হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদও ছিল না। পরে ওই হাসপাতালের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় গত ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন। বিতর্কিত রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১১ জুলাই দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে ওই চুক্তি করা হয়েছিল। পরে অধিদপ্তরের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় মন্ত্রণালয়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে ওই চুক্তি নিয়ে সমালোচিত হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে তবে দুদকের মামলায় আসামি করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সরাসরি প্রমাণ পেয়েছেন তাদেরকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়, তদন্তে যদি আরও কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাদেরকেও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারী প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে তিন হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করিয়েছেন। যেখান থেকে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগী প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা হিসেবে এক কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স , ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দ বাবদ এক কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে নেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।