সাহেদের সাথে ‘মহব্বত’ হল কীভাবে?

স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদকে বিচারকের প্রশ্ন

| শুক্রবার , ৮ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

জালিয়াতি-প্রতারণায় আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের সঙ্গে কী করে খাতির হয়েছিল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের কাছে তা জানতে চাইলেন বিচারক। রিজেন্ট কেলেঙ্কারির মামলায় ডা. আজাদ গতকাল বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কেএম ইমরুল কায়েশ ২ নভেম্বর পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। সেই শুনানিতেই স্বাস্থ্যের ডিজিকে বিচারক ওই প্রশ্ন করেন। তার পক্ষে জামিন শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাসুদ মজুমদার। দুদকের পক্ষে মীর আহম্মেদ আলী সালাম জামিনের বিরোধিতা করেন। লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে ‘সরকারি অর্থ আত্মসাতের’ অভিযোগে এ মামলা দায়ের করেছে দুদক। খবর বিডিনিউজের।
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আবুল কালাম আজাদসহ মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে মামলার অভিযোগপত্রে। শুনানি চলাকালে আবুল কালাম আজাদ বিচারককে বলেন, ‘আমি সারা জীবন কোনো অন্যায় করি নাই, আর কখনো অন্যায় করবোও না। সারা পৃথিবীতে করোনার যে অবস্থা, সেই অবস্থায় সচিব মহোদয়ের নির্দেশে মানুষের জীবন বাঁচাতে এটা (রিজেন্টের সাথে চুক্তি) করতে হয়েছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সামনে (চুক্তি) স্বাক্ষর করা হয়েছিল।’ ওই চুক্তির সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাহেদ যে একজন প্রতারক, সেটা আমার জানা ছিল না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের মাধ্যমে দৈনিক ৫০টি করোনা টেস্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মানব সেবার নামে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় করার জন্য টাকা নিচ্ছে রিজেন্ট হাসপাতাল -এমনটা অভিযোগ পরে জানতে পারি। এরপর আমি সাথে সাথে বললাম, ওই দুটি শাখা (রিজেন্ট হাসপাতালের) বন্ধ হয়ে যাবে।
বিচারক এ সময় আজাদকে বলেন, ‘সাহেদের সাথে আপনার এত মহব্বত কীভাবে হয়েছিল?’
আজাদ উত্তরে বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার দিন সাহেদের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। আরো বড় বড় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই থেকে সাহেদের সাথে আমার পরিচয়। আমি আগে থেকে জানতাম না সাহেদ একজন প্রতারক ছিলেন। স্যার, আমার ডায়াবেটিস রয়েছে। আমার জীবন তুচ্ছ করে মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমি কোনো অপরাধ করিনি, আর ভবিষতেও করব না।’
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর কোভিড- ১৯ রোগীদের চিকিৎসায় গত বছর ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন। তিন মাস না যেতেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে রিজেন্টের বিরুদ্ধে। এরপর গত বছর ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় র‌্যাব। তখন জানা যায়, চুক্তি হওয়ার বহু আগে ২০১৭ সালেই হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ওই হাসপাতালের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অনিয়মের নানা অভিযোগ তখন সামনে আসতে থাকে, কয়েক ডজন মামলাও দায়ের করা হয়।
এর মধ্যে দুদকের এই মামলাটি দায়ের করা হয় গত বছর ২৩ সেপ্টম্বর। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় খরচ বাবদ মোট তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাহেদসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয় সেখানে। মামলার এজাহারে আবুল কালাম আজাদের নাম না থাকলেও তদন্ত শেষে তাকেসহ মোট ছয়জনকে আসামি করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।
সাহেদ ও আজাদ ছাড়া বাকি চার আসামি হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা মো. দিদারুল ইসলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় রাতের আঁধারে গ্রামবাসীর ওপর হামলা
পরবর্তী নিবন্ধশাহরুখ নেপথ্যে বিজেপি