‘সাহিত্যের মিত্র যদি হয় মনুষ্যত্ব…শত্রু হচ্ছে অমানবিকতা’

রাশেদ রউফ | মঙ্গলবার , ১১ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০তম প্রতিষ্ঠাদিবস ১৮ নভেম্বর। এ দিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একধরনের স্মৃতিকাতর করে তোলে। দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হয়তো কোনো কর্মসূচি উদযাপিত হবে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদ আয়োজন করছে দুদিনের লেখক সম্মেলন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদের পরিচালনা কমিটির তৃতীয় সভায় আগামী ২১ ও ২২ নভেম্বর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২১ নভেম্বর শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার। পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক থাকবেন প্রফেসর ড.এ এফ ইমাম আলী, প্রফেসর ড. হায়াত হোসেন, প্রফেসর ড. মো. আবুল কাসেম, প্রফেসর ড. এম এ গফুর, প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক প্রমুখ। এরপর ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যচর্চা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন প্রফেসর ড. নুরুল আমিন। অধ্যাপক এলিজাবেথ আরিফা মুবাশশিরার সভাপতিত্বে প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেবেন ড. সেলিম জাহাঙ্গীর, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ, . আহমেদ মাওলা, . উদিতি দাশ সোমা, . শ্যামল কান্তি দত্ত, অধ্যাপক বিচিত্রা সেন, শাকিল আহমদ। সূচনা বক্তব্য দেবেন নিজামুল ইসলাম সরফী। ২২ নভেম্বর শনিবার দ্বিতীয় দিনে অনুবাদে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক জি এইচ হাবীবকে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। কবি অভীক ওসমানের সভাপতিত্বে আলোচক থাকবেন প্রফেসর মুজিব রাহমান, প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, . মোহাম্মদ শেখ সাদী, প্রফেসর ড. আদনান মান্নান, প্রফেসর ড. শারমিন মুস্তারী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসহাক, অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা চৌধুরী, অধ্যাপক শাহনাজ সিঁথি। ২১ নভেম্বর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ টায় থাকবে লেখক কর্মশালা। এতে আলোচক থাকবেন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম, কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ওমর কায়সার ও অধ্যাপক সেলিম সোলায়মান। ২২ নভেম্বর শনিবার বিকেলে লেখক কর্মশালার সনদ বিতরণ। প্রফেসর রীতা দত্তের সভাপতিত্বে আলোচক থাকবেন শিক্ষাসংগঠক প্রাবন্ধিক মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, প্রফেসর ড. মুন্সী আবু বকর, কথাসাহিত্যিক নাসের রহমান, কাজী রুনু বিলকিস, . শামসুদ্দিন শিশির, কায়েস চৌধুরী, অধ্যক্ষ শিমুল বড়ুয়া। এছাড়া থাকবে স্মৃতিচারণ ও কবিতা পাঠ : এতে থাকবেন অধ্যক্ষ তরুণ কান্তি বড়ুয়া, প্রফেসর ড. নারায়ন বৈদ্য, প্রফেসর অঞ্জলি বড়ুয়া, প্রাবন্ধিক রেজাউল করিম স্বপন, কবি সাইফুদ্দিন আহমদ সাকী, মারজিয়া খানম সিদ্দিকা, রূপক কুমার রক্ষিত, মো. মাজহারুল হক, জসিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক কাঞ্চনা চক্রবর্তী, প্রফেসর ড. প্রণব কুমার চৌধুরী, জিএম জহির উদ্দীন, রোকেয়া হক, প্রফেসর মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন, প্রফেসর আলেক্স আলীম, প্রফেসর মোহাম্মদ হাসানুল ইসলাম, অধ্যাপক এ ওয়াই এম জাফর, . সুমন হায়াত, মুহাম্মদ মুসা খান, সিরাজুল হক সিরাজ, ইউসুফ মুহাম্মদ, নাজিমুদ্দীন শ্যামল, . সানাউল্লাহ আলমুবীন, খোরশেদুল আনোয়ার, মুহাম্মদ জাফরউল্লাহ, রমজান মাহমুদ, মুকুল চৌধুরী, অধ্যাপক সুপ্রতিম বড়ুয়া, শাহেদ আলী টিটু, নাহিদ সুলতানা লাকি, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

আমাদের সাহিত্য, চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য ও চলচ্চিত্রকে নিয়ে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিমন্ডল। এসব মাধ্যমে কাজ করার মধ্য দিয়ে আমরা সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করি। সৃজনশীল মানুষদের কল্পনার দরোজা উন্মোচন হয় এসব মাধ্যমে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদের সম্মেলন আয়োজনের অনেকগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে। তন্মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক এবং বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, যাঁরা লেখক, তাঁদের মাঝে আন্তঃযোগাযোগ প্রতিস্থাপন করা; লেখকদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা; লেখালেখি বা সাহিত্যের অগ্রগতিতে ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের সৃষ্টিকর্মের মূল্যায়ন করা; সাহিত্যের প্রবহমান ধারাকে আরো বেগবান ও সুসংহত করার লক্ষ্যে ভূমিকা গ্রহণ করা; বছরে অন্তত একবার কোনো এক সুবিধাজনক স্থানে লেখকদের মিলনমেলার আয়োজন করা; সঙ্গে বইমেলার আয়োজন করা; সাহিত্যে যাঁদের বিশেষ অবদান রয়েছে, সেই সব প্রয়াত ব্যক্তিত্বদের জীবনী ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা, রচনা সংগ্রহ এবং প্রয়োজনে পুনঃপ্রকাশ করা; বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা; গবেষণায় উৎসাহিত করা এবং প্রয়োজনে সহায়তা দান করা; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান তরুণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আগ্রহী সাহিত্যকর্মীদের লেখালেখি চর্চায় উৎসাহিত করতে কর্মশালার আয়োজন করা উল্লেখযোগ্য।

প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, অন্য সবকিছুর মতোই সাহিত্যেরও শত্রু আছে, যেমন রয়েছে মিত্র। এক কথায় বলতে গেলে সাহিত্যের প্রধান মিত্র হচ্ছে মানুষের মনুষ্যত্ব। সকল শিল্পকলার ব্যাপারেই অবশ্য ঘটনাটি ওই একই; মানুষই শিল্পকলা সৃষ্টি করে, মনুষ্যত্বের তাগিদে এবং নিজের প্রয়োজনে। সাহিত্যও মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষের প্রয়োজনে। এবং মানুষের ভেতরকার তাগিদে। শিল্পকলার প্রধান মিত্র মানুষের ওই মানুষ্যত্বই, নির্ভরতাও ওইখানেই।চিন্তা ছাড়া সাহিত্য নেই। আর ওই চিন্তাতেই পাওয়া যাবে সাহিত্যের দার্শনিকতাকে। তিনি বলেন, ‘সাহিত্যের মিত্র যদি হয় মনুষ্যত্ব তাহলে শত্রুটা কে? শত্রু হচ্ছে অমানবিকতা, যার কেন্দ্রে রয়েছে সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা। সাহিত্য চায় মানুষকে যুক্ত করতে মানুষের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে, ইতিহাসের সঙ্গে, জ্ঞানের সঙ্গে মানুষের মৈত্রী গড়া তার লক্ষ্যগুলির একটি। মানুষকে সংবেদনশীল, দর্শনমনস্ক ও মেরুদণ্ডসম্পন্ন করার দায়িত্ব সে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। অপর পক্ষে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানার লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন, মুনাফালিপ্সু এবং স্থূলভাবে ভোগবাদী করে তোলা। সন্দেহ নেই যে সাহিত্য বর্তমানে সংকটের ভেতর রয়েছে।’

সাহিত্যের শত্রু থাকা সত্ত্বেও আমরা আশাবাদী। কেননা, দৃশ্যমাধ্যম ও ইন্টারনেটের প্রাবল্যের এযুগেও সাহিত্য তার আকর্ষণ অথবা প্রয়োজনীয়তা ধরে রেখেছে। পাঠকরা বই কিনছেন, পড়ছেন, সাহিত্য নিয়ে আলোচনাপর্যালোচনা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সাহিত্য প্রতিভাবান কবিসাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ হচ্ছে।

সময়ের বিবর্তনের ধারায় ক্রমশ বদলে যায় চারপাশের জগৎ ও জীবন। পাল্টে যায় সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্পসাহিত্যের ধারা। এই বদলে যাওয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাহিত্যও ধীরে ধীরে পাল্টে ফেলছে। রচনার বিষয়বৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটছে তার গতিপ্রকৃতি। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন প্রকরণ, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ধারার রচনা এবং নির্মাণ হচ্ছে নতুন আঙ্গিক। এজন্য পূর্বের ধ্যান ধারণারও পরিবর্তন ঘটছে। সমকালকে ধারণ করে এগোতে হচ্ছে। আশা করি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সম্মেলনে ধ্বনিত হবে কবিগুরুর সেই বাণী : ‘আপনামাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’। এরজন্য প্রয়োজন সাহিত্যিক মনোভাবাপন্ন সুন্দর পরামর্শ।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী;

ফেলো, বাংলা একাডেমি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশুর মননশীলতার বিকাশে কাজ করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় টেক্সির পেছনে বাসের ধাক্কা, একজনের মৃত্যু