একসময় আমাদের সমাজে বিপদে পড়া কাউকে দেখলে মানুষ ছুটে যেত সাহায্যের জন্য। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই বাক্যটি শুধু বইয়ের পাতায় নয় জীবনের বাস্তবতায়ও প্রতিফলিত হতো। কিন্তু এখনকার দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটুক বা কেউ নির্যাতনের শিকার হোক মানুষ দৌড়ে আসে না বাঁচাতে বরং দৌড়ে আসে মোবাইল ফোন হাতে ভিডিও তুলতে। এ শুধু তামাশা দেখার সংস্কৃতি নয়, এখন এটি হয়ে উঠেছে অনেকের আয়ের মাধ্যমও। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক যেখানে ভাইরাল ভিডিও মানেই লাইক, শেয়ার, জনপ্রিয়তা আর সেগুলো থেকে আসে অর্থ। ফলে বিপদে পড়া মানুষ আর মানুষ থাকে না, সে হয়ে যায় ‘কনটেন্ট’। কেউ মৃত্যুর সাথে লড়ছে, কেউ রক্তে ভিজে যাচ্ছে, কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর চোখে সেটি যেন একটি নাটকীয় দৃশ্য, যা তারা ক্যামেরা বন্দী করবে। সাহায্যের হাত কেন কমে গেছে? প্রথমত ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা। অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং আইনি জটিলতার ভয়ে অনেকেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে সাহস পায় না। দ্বিতীয়ত আর্থিক লোভ, ভাইরাল কন্টেন্ট থেকে আয় করার সুযোগ অনেককে বিপদকে ব্যবসার সুযোগ হিসেবে দেখতে শিখিয়েছে। তৃতীয়ত নৈতিক অধঃপতন। সহানুভূতি ও দায়বদ্ধতার জায়গা দখল করেছে বিনোদনপ্রিয়তা অন্যের কষ্ট এখন অন্যের কাছে কৌতুহল আর আনন্দের বিষয়।
সমাজের জন্য বিপজ্জনক সংকেত: আমরা এখন এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছি, যেখানে মৃত্যু, দুর্ঘটনা, নির্যাতন এইসব বাস্তবতা থেকেও মানুষ চোখ প্রথমে যাবে ক্যামেরার স্ক্রিনে, মানুষের মুখে নয়।
প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন: মানুষের জীবন বাঁচানো যে কোন ভিডিও চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিপদে পড়া কাউকে সাহায্য করা আইনি জটিলতার চেয়ে অনেক বেশি নৈতিক দায়িত্ব। ভাইরাল কন্টেন্ট হয়তো কয়েকশো টাকা এনে দিতে পারে, কিন্তু একটি সাহায্যের হাত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, একটি পরিবার রক্ষা করতে পারে।
আমরা ভুলে গেলে চলবে না, মানুষ হওয়া মানে শুধু নিঃশ্বাস নেয়া নয়, মানুষ হওয়া মানেই হৃদয় থাকা। যেদিন আমরা এই সত্য ভুলে যাব, সেদিন শুধু মানবিকতা নয় আমাদের সমাজও বিলীন হয়ে যাবে।