বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ‘বিচারিক হত্যা বা জুডিশিয়াল কিলিং’ এর শিকার বলে দাবি করেছেন তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তিনি বলছেন, তার বাবা যে ‘নির্দোষ’ ছিলেন, সে বিষয়টি প্রমাণের জন্য তারা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির বাসা কিউ সি রেসিডেন্সে সংবাদ সম্মেলন করে পরিবারের তরফ থেকে এই বক্তব্য তুলে ধরেন হুম্মাম। তার মা ফরহাত কাদের চৌধুরী, বড় ভাই ফাইয়াজ কাদের চৌধুরীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বাবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্বদ্যিালয়ে পড়ছিলেন। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে চারজন বিদেশি বাংলাদেশে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘ষড়যন্ত্র করে’ তাদের দেশে আসতে বাধা দেয়। সে কারণে আওয়ামী লীগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই সময়ের কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান হুম্মাম। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, সাক্ষীদের বিদেশ থেকে আসতে বাধা দেওয়ার গোপন বার্তাসহ অন্যান্য বার্তা উদ্ধার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশের দাবিতে আগামী রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উকিল নোটিস দেবে তাদের পরিবার।
২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। হুম্মাম বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে মুনীম আরজুমান খান, আমবার হারুন সাইগেল, ইশহাক খান খাগওয়ানি ও নিয়াজ আহমেদ নূর সাফাই সাক্ষী দিতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনাল তা নাকচ করে দেয়। ওই চারজন যেসব প্রমাণ দেখাতে চেয়েছিলেন, পরে তা ইউটিউবে প্রকাশ করে দেন বলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলের ভাষ্য।
তিনি বলেন, ‘এই ব্যক্তিরা প্রমাণ করতে পারতেন যে আব্বা ১৯৭১ সালে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি ছিলেন।’
হুম্মাম বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর সঙ্গে অনেক সময় সাংকেতিক বার্তায় যোগাযোগ করে। এরকম একটি বার্তা তাদের হাতে এসেছে। সেখানে ওই চারজনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে তারা যেন কোনোভাবে বাংলাদেশে আসার ভিসা না পায়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে যে, আব্বার সাথে একটা খুব বড় অন্যায় হয়েছে। আমার বাবাকে তারা কোনোভাবেই ফেয়ার জাস্টিসের কাছেধারেও আনতে পারল না, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটা জুডিশিয়াল মার্ডার ছিল। এর সাথে আওয়ামী লীগের রেজিমের সরকার সরাসরি জড়িত ছিল।’
হুম্মাম বলেন, আমরা বর্তমান ফরেন মিনিস্ট্রিকে একটা লিগ্যাল নোটিস পাঠাচ্ছি। আমরা তাদের কাছে ডিমান্ড করছি, এই সাইফার মেসেজগুলো ডি–ক্লাসিফাই করে দেওয়া হোক। আমরা রোববারই নোটিস পাঠাব। আমি আশা করি, আপনারা আমাদেরকে এই হত্যার ন্যায়বিচার পেতে সহযোগিতা করবেন।
হুম্মাম বলেন, এগুলো আমরা মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য করছি না। আমাদের কাছে অলরেডি যে এভিডেন্স আছে, সেই এভিডেন্স নিয়েই কিন্তু আমরা সরাসরি হাই কোর্টে যেতে পারি। আমরা চাচ্ছি যে, এই সরকার (অন্তবর্তীকালীন সরকার) এবং বর্তমান জুডিশিয়ারিকে সম্মান দেখিয়ে তাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা কোর্টে যাব। আশা করি, আমরা প্রমাণ করতে পারব যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নির্দোষ ছিলেন এবং তাকে জুডিশিয়াল মার্ডার করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে আইনজীবীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করার কথা জানিয়ে হুম্মাম বলেন, আমরা রিটের মাধ্যমে ইনশাল্লাহ কোর্টে যেতে পারব। আশা করছি, অন্তত আমরা যদি সরকারের সহযোগিতাটা পাই, এগুলো যদি ডি–ক্লাসিফাই হয়ে যায়, তাহলে ওই এভিডেন্সটা নিয়েই আমরা আদালতে যাব।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ট্রাইব্যুনালে নয়, ‘আইন মন্ত্রণালয়ে লেখা হয়েছিল’ এবং সেই রায় ঘোষণার আগেই ‘ফাঁস’ হয়েছিল বলে দাবি করেন হুম্মাম।
তিনি বলেন, সে সময় উচ্চ আদালতের একজন বিচারক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ‘সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য’ ট্রাইব্যুনালে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অনুমতি তিনি পাননি।
আব্বার মামলা চলাকালীন স্কাইপ কেলেঙ্কোরির কাহিনি বের হয়েছিল। ওই কেলেঙ্কারির অডিওতে শোনা যাচ্ছিল, তখনকার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমের কণ্ঠ। নাসিম বলছিলেন, সাকাকে যদি ঝুলিয়ে দিতে পারি তাহলে আমাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, ওই জায়গা ফাঁকা আছে।
আওয়ামী লীগ আমলে গ্রেপ্তারের পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ওপর ‘নির্যাতন’ চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমার কাছে এখনো ভিডিওগুলো আছে। আমি জানি না কে একজন ভিডিওগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়েছিল। যখন রাতের বেলা উনাকে নিয়ে যায় তখন সারা রাত টর্চার করে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পিজি হাসপাতালের একটা ভিডিও, উনাকে যখন বের করে আনছে, সেখানে দেখা গেছে তাকে মেরেছে, তার এখানে–ওখানে রক্ত। এত মানুষকে মেরেছে এরা। আমি চাই না ওরকমভাবে কারো ওপর টর্চার হোক। আর এই গভর্মেন্ট বোধহয় ওরকমভাবে টর্চার করছেও না। কিন্তু তখন বেশিরভাগ মানুষ চুপ ছিল। আপিল বিভাগে রিভিউ নিষ্পত্তির পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাননি বলে দাবি করেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমি ফাঁসির আগে বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আব্বা তুমি কোনো মার্সি পিটিশন ফাইল করেছ কিনা? আমার বাবা বলেছিলেন, ‘আমি ৬ ফুট ২ ইঞ্জি লম্বা মানুষ। মাথা কারো কাছে নিচু হবে না। আমি আল্লাহর কাছে যাচ্ছি গিয়ে, আল্লাহর কাছে গিয়ে বিচার চাইব।