সালমান শাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ

সালমানের মায়ের শুকরিয়া

| মঙ্গলবার , ২১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান জানিয়েছেন। এদিন চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।

এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেয় আদালত। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানা পুলিশকে। খবর বিডিনিউজের।

আবিদ হাসান বলেন, সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোকক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সালমানকে কীভাবে হত্যা করা হয়, তা উঠে আসে। তারপরও মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি। সবশেষ পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতি আদেশ দেন। আজ আদালত সেই আদেশ রহিত করেন। একই সঙ্গে কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। তদন্ত করে রমনা মডেল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মায়ের ‘শুকরিয়া’ : এদিকে আদালত হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেওয়ায় ‘শুকরিয়া’ প্রকাশ করেছেন তার মা নীলা চৌধুরী। গতকাল আদালতের আদেশ আসার পর নীলা চৌধুরীকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেন এক সালমান ভক্ত। লন্ডনে অবস্থানরত নীলা চৌধুরী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ; শুকর আলহামদুলিল্লাহ। নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর। সবার স্লোগান এখন নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর। আল্লাহ আছেন। ন্যায়বিচার তো আমি পাবই।

নীলা চৌধুরী বলেন, হত্যা মামলার যারা তদন্ত করল না, পিবিআই এর বনজ কুমার, পিপি আবু আব্দুল্লাহ, তারা কেন আমার বিপক্ষে গিয়েছিল, আমি তাদেরও বিচার চাইব। তারা কেন ৩২ বছরে মামলাটাকে আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করতে চাইল? এটার বিচারও আমরা আদালতের কাছে চাইব। এটা আমার মূল দাবি। বাকি আসামিদের বিচার তো হবেই।

তিনি বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করে নাই, এটা আমি প্রথম থেকেই বলেছি। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমি দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, আজ এই বাচ্চাদের (সালমানভক্ত) কারণে আমরা এই বিচারটা পেলাম। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন, আল্লাহ ৩০টা বছর জিইয়ে রাখার শক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার লাখ লাখ সন্তান আপনারা, মন খারাপ করবেন না। আমরা মামলায় জয়ী হব। আমরা সালমান শাহকে তো পাব না, কিন্তু যে অপবাদ আমার ছেলেকে দেওয়া হয়েছিল, সেটার খণ্ডন হবে এবং এভাবে যেন আর কোনো অন্যায় না হয়। দেশের আসার বিষয়ে নীলা চৌধুরী বলেন, আমি নিশ্চয়ই আসব, কেন আসব না? আপনারা জানতে পারবেন, মামলা যখন শুরু হবে। আপনারা সব জানতে পারবেন। আমি সরকারকে আহ্বান জানাব, যেসব আসামির নাম স্বীকারোক্তির মাধ্যমে এসেছে, তারা যেন দেশ ছেড়ে যেতে না পারে। আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল। আইন যেটা যেভাবে যাবে, তাদের অ্যারেস্ট করা হবে, তাদের সাক্ষ্য দেবে, চার্জশিট দিবে। চার্জশিট চাই আমি।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সে সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছেএমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি। তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি বলে, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়। সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে ‘হত্যার’ সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এরপর মামলাটি তদন্ত করে র‌্যাব। রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র‌্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো ‘প্রমাণ মেলেনি’।

পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরও তদন্ত চান। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। এরপর আবার সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়েরের আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন। তবে বিভিন্ন কারণে মাঝের কয়েক বছর রিভিশন শুনানি হয়নি। সমপ্রতি রিভিশন আবেদনের শুনানি শুরু হয়, যা শেষ হয় গত ১৩ অক্টোবর। সেদিন আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর (গতকাল) দিন ঠিক বরেন ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কমেছে ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গোপসাগরে আজকের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে লঘুচাপ