সালমান-শায়ানের বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা

১০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

| বুধবার , ৪ জুন, ২০২৫ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কাগুজে’ দুই কোম্পানির নামে ‘ভুয়া ঋণ’ নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমান আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে পর্যন্ত দীর্ঘদিন আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ছেলে শায়ান ছিলেন ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে ‘অর্থ আত্মসাৎ’ ও ‘পাচারের’ অভিযোগের একাধিক মামলা করেছে দুদক। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল মঙ্গলবার দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক দুটি পৃথক মামলা করেছে। মামলাগুলোর অভিযোগে বলা হয়, দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে পরস্পর যোগসাজশে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

গতকাল সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা ১ এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলার বাদি কমিশনের উপপরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান। অপরটি দায়ের করেছেন আরেক উপপরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাত। উভয় মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান ও ভাইস চেয়ারম্যান শায়ান ছাড়া ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক, বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা এবং দুটি কোম্পানির শীর্ষস্থানীয়দের আসামি করা হয়েছে।

একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা, ঢাকা থেকে ‘গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামে একটি অস্তিত্বহীন, ভুয়া ও কাগুজে কোম্পানির নামে ৬১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। পরে এই অর্থ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে গন্তব্য পরিবর্তন করা হয়। এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমান, শায়ান রহমান, গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর আলম চৌধুরী ও পরিচালক সৈয়দা মুনিমা হোসেন। আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, শাহ মনজুরুল হক, .আর.এম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, গোলাম মোস্তফা ও মো. জাফর ইকবাল (সাবেক অতিরিক্ত সচিব), ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মনসুর মোস্তফা (তৎকালীন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার) এবং সাবেক এমডি মো. শাহ আলম সারোয়ার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, চিফ বিজনেস অফিসার (রিটেইল) মো. নুরুল হাসনাত, চিফ ইনফরমেশন অফিসার মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, হেড অব ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সৈয়দ হাসানুজ্জামান, সাবেক হেড অব অপারেশন হেলাল আহমেদ, ডিএমডি ও সিসিও ইকবাল পারভেজ চৌধুরী, প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের তৎকালীন চিফ ম্যানেজার হোসাইন শাহ আলী, অ্যাক্টিং ইনচার্জ তাছলিমা আক্তার ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলাম।

অপর মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘সার্ভ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানির নামে জাল সাবকন্ট্রাক্ট চুক্তিপত্র ও অপ্রতুল জামানতের ভিত্তিতে ৪৩৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে নগদে উত্তোলন করা হয়। ওই অর্থও আত্মসাৎ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে গন্তব্য পরিবর্তন করা হয়, যা একটি গুরুতর আর্থিক অপরাধ বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। সালমানশায়ান ছাড়াও এ মামলার আসামিরা হলেন আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সাবেক সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সার্ভ কনস্ট্রাকশনের ‘কথিত’ পরিচালক সারওয়াত সুলতানা মনামী ও ‘কথিত’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। অন্য আসামিরা হলেন আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক পরিচালক রাবেয়া জামালী, .আর.এম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ ও মো. জাফর ইকবাল, প্রিন্সিপাল শাখার তৎকালীন চিফ ম্যানেজার ও বর্তমানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (হেড অব লোন পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট) মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. মঈনউদ্দিন, চিফ বিজনেস অফিসার মো. নুরুল হাসনাত, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, তৎকালীন রিলেশনশিপ ম্যানেজার ও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শাখা ম্যানেজার আবদুর রহমান এবং বেঙ্মিকো গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) কৌশিক কান্তি পন্ডিত।

দুটি মামলাতেই দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২এর ৪() ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর বাস কাউন্টার ও টার্মিনালে বিআরটিএ টিমের অভিযান
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচলাইশে জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে মেয়র