সালমান রহমানদের পাচারের অর্থ ফেরাতে অব্যাহত চেষ্টার কথা বলল সিআইডি

‘বেক্সিমকোর ১৭টি করপোরেট কোম্পানি ব্যবহার করে দুবাইয়ে আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে এই অর্থপাচার হয়’

| সোমবার , ১০ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে এবং ভাই ও ভাইয়ের ছেলেসহ সংশ্লিষ্টদের রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে ‘পাচার করা’ প্রায় ১০ কোটি ডলার দেশে ফিরিয়ে আনার ‘প্রচেষ্টা অব্যাহত’ রেখেছে সিআইডি। একই সঙ্গে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৭ মামলার অভিযোগপত্রও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অনুমোদন করেছে, যা শিগগির সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থাপন করা হবে। পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটের প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের।

মানিলন্ডারিং’ আইনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সিআইডির করা ১৭ মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদনের বিষয়ে জানাতে সিআইডি সদরদপ্তরে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। একইসঙ্গে দেশে ‘প্রচলিত’ রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার বন্ধ সম্ভব হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ‘আইনের শাসন ও সচেতনতার’ কথা বললেন তিনি। ‘মানিলন্ডারিং’ আইনে সালমান এফ রহমান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সিআইডির করা ১৭ মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদনের বিষয়ে জানাতে গতকাল বিকেলে সিআইডি সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করে সিআইডি। সালমানের ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও সোহেলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানও এসব মামলার আসামি। ১৪ মাসের মাথায় একযোগে সবগুলো মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা শিগগির আদালতে দাখিল করা হবে বলে এদিন সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

দুবাইয়ে সালমানদের প্রতিষ্ঠান ‘আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের’ মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের তথ্য দিয়ে ছিবগাত উল্লাহ বলেন, যখন এলসি করে বিদেশে মালামাল রপ্তানি করা হয়, সর্বোচ্চ চার মাসের মধ্যে এই টাকাটা বাংলাদেশে আসার কথা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় দীর্ঘদিন ধরে এই টাকাগুলো আসেনি, সুকৌশলে এই বিপুল পরিমাণ ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারকে এদেশ থেকে লন্ডারিং করা হয়েছে। যেটা আমাদের দেশের টাকা, এটি চলে গিয়েছে। তিনি বলেন, পরে দুবাইয়ে আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অর্থগুলো সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে সরিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

সিআইডি বলছে, বেক্সিমকোর ১৭টি করপোরেট কোম্পানি ব্যবহার করে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে জনতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখা এলসির মাধ্যমে বিপুল এ অর্থ পাচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই পাচার করা টাকাগুলোকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সকল প্রচেষ্টা অব্যত থাকবে। আমাদের কাজটি আমরা করেছি। এই সংক্রান্ত যত অংশীজন আছে, আমরা চাইব যে তারা যেন তাদের কাজটি সুসম্পন্ন করে এই পাচারের টাকাগুলো দেশে ফেরত নিয়ে আসে।

অভিযোগপত্রে সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট যারা আছে তারা সকলে এই মামলাতে আছে। যারা যতটুকু জড়িত এটা বিস্তারিত আমি এখানে বলছি না, কিন্তু কে কতটুক কীভাবে জড়িত আমাদের অভিযোগপত্রে বিস্তারিতটা আছে।

যেসব দেশে অর্থপাচার করা হয়েছে, চিঠি দিয়ে সেগুলোর কাছে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর বিপরীতে কী তথ্য এসেছে জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান কোনো স্পষ্ট জবাব দেননি। তার ভাষ্য, এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, এটা আমরা পাঠাই বিভিন্ন সময়ে এটা আসে।

ট্রেড বেইজ মানি লন্ডারিং’ বাংলাদেশে পুরাতন ঘটনা, এটি বর্তমানে বন্ধ করতে পেরেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআইডির কাজ হচ্ছে এই যে দুর্নীতি হয়েছে, এটাকে এড্রেস করা। সংশ্লিষ্ট আইনের ভেতর দিয়ে আমরা সেটি করার চেষ্টা করছি। আর সবকিছু বন্ধ করার জন্য গণ সচেতনতার বিষয়, সকলের সচেতনতা দরকার। আমরা প্রসিকিউশনের যে কাজগুলো করছি এবং আমরা বিশ্বাস রাখি এই কাজ অব্যাহত থাকলে একসময় আইনের শাসন যখন হবে, যখন দোষীরা সাজাপ্রাপ্ত হবে তখন অবশ্যই বন্ধ হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি ও অনেক প্রতিষ্ঠানের’ বিষয়ে তদন্ত করার কথা শোনা যাচ্ছিল, এ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বলতে চাই আমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র কোনো চাপ নাই। মানি লন্ডারিং যে প্রসেস, এটা আগে অনুসন্ধান করতে হয়। এটার জন্য কিন্তু অনেক সংস্থা জড়িত থাকে। যেভাবে এই পাচার করেছে এগুলো বের করা কিন্তু অনেক অনেক কঠিন। আমরা অসংখ্য ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমাদের এই ধারা কিন্তু চলমান আছে, আমরা কাউকেই আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করি না। বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার মত মানসিকতা আমাদের ভেতরে নাই।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৩ অগাস্ট সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। তবে তার ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের ছেলের বিদেশে অবস্থানের কথা সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে। সিআইডি বলেছে, জেলে থাকা সালমান এফ রহমানকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতষ্ঠিান ‘অটাম লুপস অ্যাপটারেলস লিমিটেডের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গত জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে জনতা ব্যাংকের কারও নাম রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌঁসুলি দলের বিশেষ উপদেষ্টা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগপত্র দাখিল না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এটা গোপনীয় দলিল। যখন অভিযোগপত্র দাখিল হয়ে যাবে দেন তখন তা প্রকাশযোগ্য তথ্য। প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে এখানে অভিযুক্ত আছেন। কাজেই আমি এই মুহূর্তে আমাদের কিছু আইনি সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে সেটা প্রকাশ না করাটাই উত্তম বলে মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগাছা নাশক বিষ ছিটিয়ে পান বরজ নষ্ট
পরবর্তী নিবন্ধঢাকা ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘শান্তি চুক্তি’