সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা, পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত

তার ছেলে শায়ান ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলীকেও পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা

| বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ at ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আইএফআইসি আমার বন্ড’ এর প্রচারে প্রতারণার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা, বেঙ্মিকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করে তাকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনবিএসইসি। একই কারণে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করে তাকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ওই বন্ড ইস্যুর সময় আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সালমান এফ রহমান। আর তার ছেলে শায়ান ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান। তখন বিএসইসির চেয়ারম্যান ছিলেন শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। তাকেও পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বর্তমান কমিশন।

গতকাল বুধবার বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার কমিশনের ৯৬৫তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। খবর বিডিনিউজের।

গাজীপুরে বড় একটি আবাসন প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহের কথা বলে ২০২৩ সালে ভালো লভ্যাংশ রেখে জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড। ২০২৩ সালের ৪ জুন ১৫০০ কোটি অভিহিত মূল্যে এবং ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যে ওই বন্ডের অনুমোদন দেয় তৎকালীন বিএসইসি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রীপুর টাউনশিপ নামে একটি কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার পরপরই তারা বন্ড ইস্যুর আবেদন করে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৫০ কোটি টাকা এবং মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়নের জন্য উত্তোলন করা হয়, যা কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

নাম ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ হলেও ওই বন্ড আইএফআইসি ব্যাংকের নয়। এ ব্যাংক শুধু ওই বন্ডের গ্যারান্টার বা জামিনদার। তবে এক হাজার কোটি টাকা তোলার জন্য এমনভাবে প্রচার চালানো হয়, যা দেখে মনে হবে ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, বেঙ্মিকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অংশীদার। আবার তারা আইএফআইসি ব্যাংকেরও শেয়ারহোল্ডার। ফলে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ ইস্যু করার ক্ষেত্রে স্বার্থ সংঘাতের (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) বিষয়টি নিয়েও কথা ওঠে।

২০২৩ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠিত শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের কোনো ফ্ল্যাট নির্মাণ বা প্লট তৈরির অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাদের বন্ডের গ্যারান্টার হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। অর্থাৎ, আইএফআইসি ব্যাংকের সুনাম ব্যবহার করে টাকা তোলার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে শ্রীপুর টাউনশিপকে। সংবাদপত্রে দেওয়া বিজ্ঞাপনগুলোতে আইএফআইসির নাম বড় করে লেখা থাকলেও শ্রীপুর টাউনশিপের নাম লেখা থাকত ছোট ফন্টে।

বিএসইসি বলছে, এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সালমান, শায়ান, শিবলী ছাড়াও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে সব ধরনের কাজ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসিকে সতর্ক করা হয়েছে।

আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, মো. গোলাম মোস্তফা, মো. জাফর ইকবাল (এনডিসি), কামরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকেও সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪ কোটি ১৪ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে হানডা
পরবর্তী নিবন্ধ৩ অগাস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে : নাহিদ