সার্ভারে সমস্যা : অনলাইনে যাচ্ছে না করোনা রিপোর্ট

চট্টগ্রামের বিদেশগামীদের হয়রানি চরমে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা-ই চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসনের বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। করোনা রোগীর চিকিৎসা নয়, বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট অনলাইনে প্রদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রিপোর্ট নিয়ে সংকটে পড়েছেন বিদেশগামীরা। ফ্লাইট মিস হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিমানবন্দর থেকে ফেরত এসে আবারও কোভিড পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। সার্ভার ঠিকঠাকভাবে কাজ না করায় বিদেশগামীদের হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালে বিশ্বব্যাপী থমকে যাওয়া ফ্লাইট চলাচল শুরু হওয়ায় বিদেশগামীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। পর্যটন খাতে বিদেশগামীর সংখ্যা খুব একটা না থাকলেও নানা প্রয়োজনে মানুষ বিদেশ ছুটছেন। দেশে আটকা পড়া হাজার হাজার প্রবাসী বিদেশে কর্মস্থলে ফেরত যেতে মরিয়া। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও ছুটছেন অনেকেই। চিকিৎসার জন্য বহু মানুষই বিদেশ যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কোনো কাজে বিদেশ যেতে কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ সনদ সংগ্রহ করতে হয়। সরকারি নির্দেশনায় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন অফিসে রেজিস্ট্রেশন করে জেনারেল হাসপাতালে নমুনা প্রদান করতে হয়। নমুনা দেয়ার আগে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে টিকিট, ভিসা এবং পাসপোর্টের ফটোকপি দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর জেনারেল হাসপাতালের নির্দিষ্ট বুথে গিয়ে নমুনা প্রদান করতে হয়। ওই নমুনা ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা করে রিপোর্ট আবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ওই রিপোর্ট অনলাইনে সার্ভারে আপলোড দেয়া হয়। সার্ভারে দেয়া এই রিপোর্ট দেখার পরই কেবল বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ওই যাত্রীকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে। অন্যথায় তার যাত্রা আটকে দেয়া হচ্ছে। এই ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট হাতে নিয়ে বিমানবন্দরে গেলেও অনেক যাত্রী বিদেশ যেতে পারছেন না। যতক্ষণ না ওই রিপোর্ট অনলাইনে আপলোড হচ্ছে ততক্ষণ ওই যাত্রীর কোভিড পরীক্ষা হয়েছে বা রিপোর্ট নেগেটিভ তা বিবেচিত হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে যাত্রীদের মাঝে চরম উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সার্ভারের গোলমালেই বহু যাত্রীর ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রতিদিনই ৭০০ থেকে ৯০০ জন বিদেশযাত্রী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে কোভিড পরীক্ষা করান। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। আর একই সাথে বাড়ছে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভোগান্তি।
প্রচলিত নিয়মানুযায়ী কোভিড পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে সিভিল সার্জন অফিসে, নমুনা নেয়া হয় জেনারেল হাসপাতালে। নমুনা পরীক্ষা হয় ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে। একদিন পর বিআইটিআইডি থেকে পরীক্ষার রিপোর্ট আসে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে তা অনলাইনে আপলোড দেয়া হয় সার্ভারে। সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করা হয় ঢাকাস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞে নানা ঘাট থাকলেও সার্ভার নিয়ে সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে সার্ভার ঠিকঠাকভাবে কাজ না করলে সব আয়োজনই মাঠে মারা পড়ে। গত দুইদিন সার্ভার প্রচণ্ড সমস্যা করছে। একটি রিপোর্ট আপলোড করতে দশ মিনিট সময় লেগে যাচ্ছে। কখনো কখনো পেজই ওপেন হচ্ছে না। বুধবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সারারাত কাজ করেও সব রিপোর্ট আপলোড দেয়া সম্ভব হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। আর রিপোর্ট আপলোড দেয়া না হলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর বিদেশযাত্রা বাতিল করে দেয়া হচ্ছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ম্যানুয়েলি এবং টেলিফোন করে যাত্রীদের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি দেখভাল করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, কোভিড পরীক্ষার সনদ হাতে থাকলে ওই যাত্রীকে বিদেশ যেতে দিলে সংকট এত প্রকট হতো না। অনলাইন সার্ভারে রিপোর্ট প্রদর্শনই সংকটের মূল কারণ। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিল বা স্বাক্ষর দেয়া রিপোর্ট গ্রহণ করলেই পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে যেতো।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, বিদেশ যাত্রীদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনলাইনে রিপোর্ট আপলোড করা যাচ্ছে না। এতে বহু মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী রাতে বাসায় যেতে পারছেন না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সারারাত কাজ করে বিদেশযাত্রীদের রিপোর্ট আপলোড দেয়ার কাজ করছি। কিন্তু সার্ভারের সমস্যার কারণে রিপোর্ট আপলোড দেয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় লাগছে। তিনি গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার বিদেশযাত্রীর কোভিড পরীক্ষা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এরমধ্যে ১০৮৬ জনের কোভিড পজেটিভ ছিল।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর কোভিড সনদ নিয়ে সংকটের কথা স্বীকার করে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি সহজ করা দরকার। অনলাইনে সার্ভারের পরিবর্তে হার্ড কপি গ্রহণ করা হলে এত ভোগান্তি হতো না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিস্থিতি ভালো হলে তবেই স্কুল খুলবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধদুই শিক্ষার্থীকে বাস চালকের মারধর, চবির প্রধান ফটকে তালা