দেশে সারের চাহিদা বাড়ছে। তবে গ্যাস সংকটসহ যান্ত্রিক সংকটে দেশীয় সার কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাড়ছে আমদানি। চলতি অর্থবছরে বিদেশ থেকে ৫০ লাখ টনের বেশি রাসায়নিক সার আমদানি করতে হবে।
সূত্রে জানা যায়, ইউরিয়া সার উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকটে সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে মাসের পর মাস বন্ধ রাখা হয় ইউরিয়া সার কারখানাগুলো। আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে কারখানা চালু করা হলেও যান্ত্রিক ত্রুটিতে উৎপাদনে সমস্যা হয়। সিইউএফএলসহ একাধিক সার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাড়ছে সার আমদানি। বিদেশ থেকে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সারের ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ টন সারের চাহিদা রয়েছে। দেশে প্রধানত চার ধরনের সার আমদানি করা হয়। ইউরিয়া ছাড়াও বিপুল পরিমাণ ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি করা হয়। চীন, সৌদি আরব, কাতার, মরক্কো, রাশিয়া ও তিউনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয় টিএসপি ও ডিএপি। রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে আমদানি করা হয় দেশের প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ এমওপি সার।
কানাডা থেকেও আমদানি করা হয় এমওপি সারের ৪০ শতাংশের বেশি। দেশের সাতটি ইউরিয়া সার কারখানার পাশাপাশি চট্টগ্রামস্থ টিএসপি ও ডিএপি সার কারখানায় কিছু সার উৎপাদিত হয়। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় কম বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
জানা যায়, গত অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার টন। আমদানি করা হয়েছে ১৫ লাখ ৬৬ হাজার টন। টিএসপি সার উৎপাদিত হয় ৭১ হাজার টন। আমদানি করা হয় ৬ লাখ ৭৫ হাজার টন। ডিএপি সার উৎপাদন করা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার টন। আমদানি করা হয়েছে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টন। গত অর্থবছরে দেশে কোনো এমওপি সার উৎপাদিত হয়নি। তবে ৯ লাখ ৩ হাজার টন আমদানি করা হয়েছে।
দেশে উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারে ভেজাল দেয়া হয়। অর্থাৎ আমদানিকৃত সারের চেয়ে বেশি সার কৃষিতে ব্যবহৃত হয়েছে, যা ভেজাল দিয়ে যোগান দেয়া হয়। এতে করে গত অর্থবছরে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি মিলে ৫৭ লাখ টন সার আমদানি হয়েছে। দেশে উৎপাদিত সারসহ মোট ৬৯ লাখ টন সার ব্যবহার হয়েছে বলে তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে ৭২ লাখ টনের বেশি সার ব্যবহৃত হয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, সারে ভেজাল হিসেবে ব্যবহৃত পণ্যের কোনো হিসাব থাকে না। ফলে ৬৯ লাখ টন প্রকৃত সারের সাথে ভেজাল দেয়া পণ্য মিলে পরিমাণ কয়েক লাখ টন বেড়েছে। চলতি বছরও সারের চাহিদা একই থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে উৎপাদনে সংকট থাকায় সার আমদানি বাড়িয়ে বাড়তি চাহিদা মোকাবেলা করতে হবে।