সারা বছর হাঁটুপানি!

নামার বাজার ব্রিজ সড়ক

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শনিবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড পৌরসদরের পশ্চিম আমিরাবাদ নামার বাজার ব্রিজ। ব্রিজটির নিচের পাকা সড়ক বছরের বেশির ভাগ সময় হাঁটুপানিতে তলিয়ে থাকে। অথচ এ সড়ক দিয়ে কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে চলাচল করতে হয়। প্রায় সারাবছরই একইরকম দুর্ভোগে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দারা। তারা অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ব্রিজটির অপসারণ চান।

এলাকাবাসী জানান, ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সময় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে অপরিকল্পিতভাবে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। নামারবাজার ব্রিজের নিচের অংশের সড়ক নৌকা আকৃতির। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলে দুই দিক থেকে পানি এসে ব্রিজের নিচের ঢালু অংশে জমতে থাকে। এতে সেখানে রীতিমতো গভীর জলাশয় সৃষ্টি হয়ে যায়। আর এ পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। তাই সেখানে পানি অনেকদিন স্থায়ীভাবে জমে থাকে। অথচ মুরাদপুর সিরোড নামক সড়কটির সাথে পৌরসদরের সাথে দক্ষিণে কুমিরা থেকে উত্তরে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্বের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের হাবীব রোডের সংযোগ আছে। এছাড়া এটি পৌরসদরের বেশ কয়েকটি গ্রাম, মুরাদপুর ইউনিয়নে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাও। সব মিলে এই ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে।

আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা তাপস নন্দী জানান, ব্রিজটির নিচের পাকা সড়ক বছরের বেশির ভাগ সময় হাঁটুপানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে তাদেরকে জামাকাপড় ভিজিয়ে পার হতে হয়। এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে চান তারা।

ব্রিজটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নামারবাজার এলাকার বাসিন্দা সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম হেদায়েত বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। কোন মেধা দিয়ে প্রকৌশলীরা এমন একটি ব্রিজ নির্মাণ করল তা আমাদের বোধগম্য নয়। বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকায় নামারবাজার ব্রিজটি এখন পৌর এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, ওই সড়কে শুধু যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে তাই নয়। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সময় নামারবাজার ব্রিজটি উচ্চতা কম রাখায় ফায়ার সার্ভিসের একটি বড় গাড়িও ওই পথে প্রবেশ করতে পারে না। একদিন বৃষ্টি হলে গ্রামের নারীপুরুষ, ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে সবাইকে কাপড় হাঁটুর ওপর তুলে চলাফেরা করতে হয়। মহাসড়কে সিএনজি টেক্সি বন্ধের পর এ পথে অসংখ্য সিএনজি টেক্সি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত শুরু করে। সেগুলোও এখানে এসে পানিতে তলিয়ে যায়। কারমাইক্রোবাসের ভেতরে পানি ঢুকে যায়। তারা জানান, গ্রামবাসী এ সমস্যা নিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধর্না দিলেও ব্রিজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উল্লেখ করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে কোনো সমাধান হচ্ছে না।

পৌরসদরের নামারবাজার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ফজলে এলাহী পায়েল বলেন, ব্রিজের নিচে সারাবছর পানি জমে থাকায় মানুষ আমাকে এবং মেয়রকে বারবার জানাচ্ছে। কিন্তু এ অংশটি সওজের। তাই ইচ্ছে থাকলেও সেখানে হাত দিতে পারি না। তবে পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে বিভিন্ন ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক বছরে বহু টাকার কাজ করা হয়েছে। কিন্তু মূল অংশটুকু ঢালু হওয়ায় সেখানে পানি জমে থাকছে।

সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম বলেন, নামারবাজারের উপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়ক চার লেনের ব্রিজটি নির্মাণের সময় বেশি উঁচু না করায় এবং নিচের সড়কটি বেশি ঢালু হওয়ায় চারপাশের পানি গড়িয়ে সড়কের উপর চলে আসে। এ অংশ সওজের বলে আমি সেখানে কাজ করতে পারি না। এছাড়া প্রতিদিন মোটর চালিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয়। কিন্তু এখানে পানির চাপ কমাতে বারবার লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ড্রেন তৈরিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। তবুও সমস্যার সমাধান হয়নি।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সীতাকুণ্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রুকন উদ্দিন খালেদ বলেন, অনেক আগেই ব্রিজটি নির্মিত হয়েছে। এর কাঠামো এখন আর পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসব জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হবেন
পরবর্তী নিবন্ধ৭০ ভাগ মানুষ যাকে ভালোবাসে, তিনি কেন বিদায় নেবেন : কাদের