সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘট আজ থেকে

পুরাতন দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের নতুন আন্দোলন ।। যাত্রী পরিবহন কর্মসূচির আওতামুক্ত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আজ সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে অভ্যন্তরীন রুটে নৌ যান ধর্মঘট শুরু হচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্ধ হচ্ছে লাইটারেজ জাহাজসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল। তবে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত নৌযানকে এই কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
খোরাকি ভাতার পুরনো দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা নতুন করে আন্দোলনে নামায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের বহির্নোঙরের সব কার্যক্রম বন্ধ হলে দেশের আমদানি-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারি দল সমর্থিত নৌযান শ্রমিকদের ছয়টি পৃথক সংগঠন নতুন মোর্চা গঠন করে আন্দোলনে যাওয়ায় সংকট প্রকট হয়ে উঠার আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে এসব দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে দেশে নৌ পরিবহন খাতকে জিম্মি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।
সূত্র জানায়, বন্দরের বহির্নোঙর থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করা হয়। বন্দরের বহির্নোঙরে বর্তমানে বছরে নয়শ’র বেশি মাদার ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং হয়। এসব জাহাজে অন্তত ছয় কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল। এছাড়া বন্দরের ওভার সাইটেও বিপুল পরিমাণ পণ্য লাইটারেজ জাহাজে করে দেশের অন্তত ২৫টি স্থানে পরিবহন করা হয়। সিইউএফএল ও কাফকোর সারের একটি অংশও বিসিআইসির নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন জেলার গুদামে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে প্রায় দেড় হাজার লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজের স্বাভাবিক চলাচলের উপর বন্দরের বহির্নোঙরসহ দেশের পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ক পুরোপুরি নির্ভর করে।
সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতারা জানান, প্রচলিত নিয়মে জাহাজ মালিকরা প্রতিটি জাহাজের শ্রমিকদের ওই মাসের খাবার বাবদ বেতনের একটি অংশ মাসের শুরুতেই অগ্রিম প্রদান করেন। মাস শেষে এই টাকা বেতনের সাথে সমন্বয় করে বেতন পরিশোধ করা হয়। ‘খাদ্য ভাতা’ হিসেবে অগ্রিম নেয়া টাকা বেতনের সাথে সমন্বয় করার নিয়মই চলে আসছে অনেকদিন ধরে। কিন্তু শ্রমিকরা ‘খাদ্য ভাতা’ হিসেবে অগ্রিম নেয়া অর্থ বেতনের সাথে সমন্বয় না করার দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বেতনের বাইরে আলাদা ‘খাদ্য ভাতা’ প্রদানের দাবিতে ইতোপূর্বেও আন্দোলন করেছে।
লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদাত হোসেন গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। অনেক অনুরোধ করেছি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বরও আমরা এসব দাবি নিয়ে ধর্মঘট শুরু করেছিলাম। ওই সময় মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে ‘খাদ্য ভাতা’র দাবিটি মেনে নেয়া হয়।
বলা হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এই দাবি কার্যকর করা হবে। অন্যান্য দাবিও ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করার কথাও লিখিতভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই আমাদের সামনে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন,নৌ শ্রমিক অধিকার সংরক্ষন পরিষদ নামে আমাদের এই মোর্চার ব্যানারে এই কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করা হবে। বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ নৌ যান শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ নৌ যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার ভলগেট শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ট্রলার ভলগেট শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন যৌথভাবে এ মোর্চা তৈরি করেছে। যাত্রী পরিবহন খাতকে কর্মবিরতির বাইরে রাখা হয়েছে।
জাহাজ মালিকরা বলেছেন, করোনাকালে পুরো খাতই দিশেহারা।জাহাজ মালিকরা স্বাভাবিক বেতন ভাতা চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। সেখানে এধরনের দাবিতে পুরো খাতটিকে জিম্মি করা দুঃখজনক।
লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের প্রধান নির্বাহী মাহবুব রশিদ আজ সন্ধ্যা থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধের বিষয়টি শুনেছেন বলে স্বীকার করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্পদের হিসেব দিতে ‘পিএ’এজাজকে দুদকের নোটিশ
পরবর্তী নিবন্ধসর্বনিম্ন মৃত্যু ৫ মাসে