সারচার্জ আরোপ করায় সাত জাহাজের অনুমোদন বাতিল

বর্ধিত ট্যারিফের অতিরিক্ত খরচ সামাল দিতে সারচার্জ চায় শিপিং কোম্পানিগুলো, বন্দরের না

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত নতুন ট্যারিফ নিয়ে ব্যবহারকারীদের টানাপোড়েনের মাঝে এবার নতুন করে যুক্ত হলো বিদেশী শিপিং কোম্পানি। গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হওয়া বাড়তি ট্যারিফ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো সারচার্জ আরোপ করে। বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফের অতিরিক্ত খরচ সামাল দিতে শিপিং কোম্পানিগুলো সারচার্জ আরোপ করছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ‘গেজেটের শর্তভঙ্গ’ হিসেবে গণ্য করে শিপিং কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। গতকাল প্রথম দফায় ফ্রান্সভিত্তিক একটি শিপিং লাইনের সাতটি জাহাজের অনুমোদন বাতিল করেছে। সারচার্জ প্রত্যাহার না করলে জাহাজ পরিচালনার ছাড়পত্র বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে অন্যান্য কোম্পানিগুলোকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের ফলে দুইটি শিপিং কোম্পানি ইতোমধ্যে সারচার্জ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী বন্দরের বিভিন্ন সেবা খাতে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। গেজেট প্রকাশের দিন থেকে বাড়তি ট্যারিফ কার্যকরের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তির মুখে ট্যারিফ আদায় এক মাস স্থগিত রাখা হয়। গত ১৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে বাড়তি ট্যারিফ আদায় শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকেই বন্দর এই ট্যারিফ আদায় করে থাকে। পরে তারা আমদানিরপ্তানিকারকদের ওপরই তা আরোপ করে থাকে। তবে অধিকাংশ শিপিং কোম্পানি চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় জাহাজ পরিচালনা করার ফলে হুট করে বা বছরের মাঝামাঝি সময়ে ট্যারিফ বাড়ানো সম্ভব হয় না। ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চারটি শিপিং লাইন সারচার্জ আরোপ করে।

৭ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে ফ্রান্সের সিএমএসিজিএম, সুইজারল্যান্ডের এমএসসি, ডেনমার্কের মায়ের্সক লাইন এবং দেশীয় এইচআর লাইনস বাড়তি চার্জ ঘোষণা করে।

ফ্রান্সভিত্তিক শিপিং লাইন সিএমএসিজিএম সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সাতটি জাহাজের অনুমোদন সাময়িকভাবে বাতিল করে দেয়। এর মধ্যে দুটি জাহাজ বন্দরের জলসীমায় অবস্থান করলেও জেটিতে ভিড়তে পারেনি। কোম্পানিটি পরে সারচার্জ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক এমএসসি সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের চাপে তারা বাড়তি চার্জ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।

ডেনমার্কের মায়ের্সক লাইন তাদের ঘোষিত নতুন টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ অনুযায়ী ২০ ফুটি কন্টেনার ১২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ ডলার এবং ৪০ ফুটি কন্টেনারে ২০৫ ডলার থেকে ৩১০ ডলার করার কথা বলা হয়। কিন্তু গতরাত পর্যন্ত এই কোম্পানির সারচার্জ প্রত্যাহারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দেশীয় এইচআর লাইনস প্রত্যেক কন্টেনারে ২৫ থেকে ৩০ ডলার বাড়তি সারচার্জ ধার্য করেছে। তারাও এখনো সিদ্ধান্ত বদল করেনি।

বন্দর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এই চারটি শিপিং লাইনই চট্টগ্রাম বন্দরের বেশির ভাগ কন্টেনার পরিবহন করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, নতুন ট্যারিফ নিয়মমতো কার্যকর হয়েছে এবং শিপিং কোম্পানিগুলোকে সারচার্জ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানকে চাপ দেয়া হয়নি। বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে দুইটি কোম্পানি সারচার্জ প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০টি লাইনই বাংলাদেশের অধিকাংশ কন্টেনার পরিবহন করে।

বন্দর ও শিপিং খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, ট্যারিফ যেভাবেই আদায় হোক শেষ পর্যন্ত সেই বাড়তি খরচ আমদানিরপ্তানিকারকদের মাধ্যমে ভোক্তাদের ঘাড়ে চড়বে। ফলে পরিবহন ব্যয়ের চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের সাধারণ ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়াবে। ইতোমধ্যে পোর্ট ইউজার্স ফোরামের ব্যানারে বড় ধরনের সভা থেকে এখনই ট্যারিফ বৃদ্ধি না করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।

পোর্ট ইউজার্স ফোরাম আগামী ১৮ অক্টোবর নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে বড় ধরনের ব্যবসায়ী সমাবেশের ডাক দিয়েছে। পোর্ট ইউজার্স ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক ট্যারিফ আদায়ের প্রতিবাদে পরবর্তীতে আরো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজিতেছেন শিবির প্যানেলের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আকাশ দাস
পরবর্তী নিবন্ধহাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ড চাইল প্রসিকিউশন