কুমিল্লাসহ দেশে সাম্প্রদায়িক হামলায় সরকারের মদদ রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগ নিজেদের সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে নিতে মাঝে মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা দাবি করছি অবিলম্বে দায়িদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হোক এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক। গতকাল বাদে জুমা চিটাগং ক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এর আগে নাসিমন ভবনস্থ নগর বিএনপি কার্যালয় সংলগ্ন জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি। সেখানে নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। পরে শেষে চিটাগং ক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করছি, বর্তমান সরকার ‘অবৈধভাবে’ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে হাজার বছর ধরে। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান ভাই-ভাইয়ের মত সব সময় একসাথে বসবাস করে আসছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, কুমিল্লার আগে রামু ও নাসিরনগরের ঘটনা দেখেছি। আমাদের কাছে মনে হয়, সরকারের কোনো মহলের ইঙ্গিতে বা মদদে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে।
ফখরুল বলেন, বিএনপি সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেছে। আপনারা দেখেছেন, আমাদের সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ‘অবৈধ’ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সবসময় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি করছে। মাঝে মাঝে তাদের মূল যে সংকটগুলো রয়েছে সেখান থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিতে, এ ধরনের ঘটনাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
এর আগে দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য চট্টগ্রামবাসীর দোয়া চান মির্জা ফখরুল। এসময় তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশকে উন্নত করার জন্য তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। সেই নেত্রীকে আজকে অন্যায়ভাবে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, বেগম জিয়া বর্তমানে করোনা পরবর্তী নানা জটিলতা ও পুরনো রোগে গুরুতর অসুস্থ। দীর্ঘ কয়েক বছর কারাগারে রাখার কারণে চিকিৎসা না হওয়ায় তিনি অনেকগুলো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার হার্ট, কিডনি ও লিভারে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাঁর পুরনো অসুখ আর্থ্রাইটিসও রয়েছে। বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, গতকাল সকালে বিমানযোগে চট্টগ্রাম আসেন বিএনপি মহাসচিব। রাতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। আজ বিকেলে কাজীর দেউড়িস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত নগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার।