সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে রামুর বৌদ্ধ বিহারে আগুন : এসপি মাহফুজুল

কক্সবাজার ও রামু প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন বানচাল, সরকারকে বিব্রত করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে রামুর প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারে ‘পরিকল্পিতভাবে’ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. আব্দুল ইয়াছির ওরফে শাহজাহান (২৩) নামের এক যুবককে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এই ইয়াছিরই ঘটনার মূল হোতা। সে অকপটে সবকিছু পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এসপি মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। গ্রেপ্তার শাহজাহান রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পূর্ব মেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী। তার বাবা আবদুল করিম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। গত ৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত ২টার দিকে রামু সদরের চেরাংঘাটায় অবস্থিত রাখাইন সম্প্রদায়ের দেড়শ বছরের প্রাচীন কাঠের নির্মিত উসাইচেন বৌদ্ধ বিহারে বা বড় ক্যাং এ আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অগ্নিকাণ্ডে বিহারটির উপরের মূল প্রবেশদ্বারের সিঁড়িটি পুড়ে যায়। ঘটনার পর দিন ৬ জানুয়ারি বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মংকিউ রাখাইন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার ৫ দিনের মাথায় পুলিশ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রত করা, দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ব্যাহত করায় ছিল এ অগ্নিসংযোগের উদ্দেশ্য। এসপি বলেন, বিহারে আগুন দেওয়ার মাত্র ২০ মিনিট আগে রামু ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফোন করে জানানো হয় ঈদগড় বাজারে আগুন লেগেছে। এ খবর পেয়ে স্টেশন কর্মকর্তা সৌমেন বড়ুয়ার নেতৃত্বে দমকলকর্মীদের একটি ইউনিট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ঈদগড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু ঈদগড় বাজারে পৌঁছে তারা নিশ্চিত হয় যে, খবরটি ছিল ভুয়া। আবার একই মোবাইল ফোন থেকে রামু বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে চেরাংঘাটায় আগুন লাগার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে বলা হয়। পুলিশ সুপার মাহফুজ আরো বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এই মোবাইলের সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার শাহজাহানকে শনাক্ত করা হয়। এরপর পুলিশ মঙ্গলবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক নিকটাত্মীয়ের বাসা থেকে আবদুল ইয়াছির ওরফে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে মোবাইল সিমটি জব্দ করা হয় বলে জানান এসপি। পুলিশ সুপার বলেন, মূলত অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি বাধাহীন করতে ঘটনার মূলহোতা আব্দুল ইয়াছির ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ অফিসকে ফোন করে মিথ্যা তথ্য দেয়। পরে ঘটনার সময় ব্যবহৃত সিমটি মোবাইল ফোন সেট থেকে আলাদা করে নিজের এলাকার কচু ক্ষেতে ফেলে দিয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপন করে ইয়াছির। ঘটনার সময় আব্দুল ইয়াছির একাই ছিল। ক্যাংএ অগ্নিসংযোগের জন্য সে কিছু কাপড়ের টুকরা এবং বড় একটি বোতলে তরল দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুটপাত ধরে ফিরছিলেন বাসায়, একটি কংক্রিটের ব্লক থামিয়ে দিল জীবন
পরবর্তী নিবন্ধকৃষিজমির টপসয়েল কাটায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা