সাম্প্রতিক কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও আমাদের প্রত্যাশা

সুবর্ণা চৌধুরী | রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

সমপ্রতি খবরে পড়া কয়েকটা ঘটনামা তাঁর সদ্যজাত সন্তানকে হত্যা করেছেন। আমরা আঁতকে উঠে হয়তো ভাবি-“কীভাবে একজন মা এমন করতে পারেন?” কিন্তু আমরা কি কখনও এই মায়েদের মনের খবর নিয়েছি? বাচ্চা জন্মানোর পর পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনএক অদৃশ্য মানসিক রোগ, যা মাকে ভেতর থেকে গ্রাস করে। এই অবস্থা একজন মাকে এতটাই ভেঙে দিতে পারে যে তিনি নিজের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্নে পড়ে যান। অথচ সমাজের চোখে মা মানেই নিঃস্বার্থ, সবকিছু হাসিমুখে সহ্য করা এক সত্তা। তাই তাঁর কষ্ট আমাদের চোখেই পড়ে না। রাত জেগে যত্ন, দায়িত্বের বোঝা, পরিবারের চাপসব মিলিয়ে অনেক মায়ের মনোবল ভেঙে যায়। ধৈর্য শেষ হয়ে যায়।

গল্প, উপন্যাসে সর্বংসহা, ত্যাগী, নীরবে সব কিছু সহ্য করে যাওয়া এমন এক মায়ের প্রতিচ্ছবি আমাদের মনে তৈরি করে দিয়েছে যে আমরা বাঙালিরা ভুলেই যাই, মায়েরাও আলাদা একজন মানুষ। মায়েরও নিজস্ব কিছু ইচ্ছা আছে, সুখদুঃখ আছে, চাওয়াপাওয়ার একান্ত অনুভব আছে। একজন মা শুধু মা নন, তিনি একজন পূর্ণ মানুষ।

অন্যদিকে, বাবারাও, সব কিছু ভুলে শুধুই সন্তান ও সংসারের জন্য নিজেকে নিঃশেষ করে দেওয়া চরিত্র। তাঁরা যেন কেবল দায়িত্ব পালনের প্রতীক। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনের মাঝে তাঁদেরও ক্লান্তি আসে, একাকিত্ব গ্রাস করে, ভালোবাসার খিদে জাগে। অথচ, সেই অনুভূতিগুলো আমরা বুঝে ওঠার আগেই ‘বাবা তো এমনই’ বলে পাশ কাটিয়ে যাই। আর বাবাকে গাম্ভীর্যের দূরত্বে এমন উচ্চ স্থানে রাখা হয় যে সেখানে সর্বংসহা মায়ের অবস্থান অনেক নিচে। তাই মাঝে মাঝে আমরা মাকে ন্যূনতম সম্মানটুকুও দিতে ভুলে যাই। মায়ের ভালোবাসা,ত্যাগ সবকিছুকে টেকেন ফর গ্রান্টেডকরে ফেলি।

সমস্যা হলো, আমরা যেভাবে এই চরিত্রগুলোকে গল্পউপন্যাসে কিংবা নাটক সিনেমায় নিখুঁত দেখে বড় হই, বাস্তব জীবনেও তাঁদের ঠিক সেইভাবেই দেখতে চাই। কিন্তু আমরা কি কখনো ভাবিএই মা যিনি সব সময় হাসিমুখে আমাদের পাশে দাঁড়ান, তিনিও এক সময় ক্লান্ত হন? হয়তো তিনি কিছু বলতে চান, কিছু শুনতে চান ্তকিন্তু আমরা সেই জায়গা তাকে দিই না। আমরা ধরে নিই তিনি সব কিছু আপনা থেকেইসামলে নেবেন।

আমরা কি খেয়াল করিবয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবনসঙ্গী হারিয়ে বাবা অথবা মা কীভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন? শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় সন্তানরাও হয়ে ওঠে দূরের মানুষ। প্রতিবেশী বলতে এখন আর কেউ নেই, কাছের বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কও কমতে থাকে। তারা তখন একাকিত্বে ডুবে যান, অথচ কথা বলার মতো কেউ পাশে থাকে না।

আমরা চাই আমাদের মা হোক গল্পের সেই সর্বত্যাগী মা, আর বাবা হোক সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া নীরব যোদ্ধা। কিন্তু নিজেরা কি কখনো সেই গল্পের আদর্শ সন্তান হয়ে উঠি? বছরে একদিন মধুর আমার মায়ের হাসিবলে মা দিবসের পোস্ট আর বাবা কতদিন কতদিন দেখিনি তোমায়বলে বাবা দিবসের আবেগি পোস্ট না দিয়ে বরং তাঁদেরকে আলাদা মানুষ ভাবতে শিখি। তাদের নিজস্ব সুখ দুঃখগুলোকেও আমলে নিতে শিখি। নইলে সদ্য মা কিংবা বয়স্ক যিনিই হন না কেন, আমরা ভয়ংকর সব খবরই পেতে থাকব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগমন
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে