অটো চালক বাবা ও গার্মেন্টস কর্মী মায়ের কন্যা সামিয়ার খাতা কেনা হলেও সহসা বই জোগাড় হতো না। প্রাইভেট পড়ার কথা ভাবতে সাহসও পেতো না সে। তবু চোখে মুখে স্বপ্ন ছিল তার, অদম্য বাসনা ছিল এগিয়ে যাওয়ার। সামিয়ার এ ইচ্ছাশক্তিই তার প্রথম ধাপের সফলতা এনে দিয়েছে। এসএসসির ফলাফলে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জনের মধ্য দিয়ে এবার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখছে সে।
বলছিলাম চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর বি-ব্লক তালতলা পুকুরপাড় সংলগ্ন আলমগীরের ভাড়া ঘরের বাসিন্দা অটো চালক হাবিবুর রহমান ও বিবি সায়রার কন্যা সামিয়া আক্তার শারমিনের কথা। অভাবী পরিবারের সন্তান সামিয়া সব ধরনের সুবিধা বঞ্চিত থেকেও চমৎকার ফলাফল ছিনিয়ে এনে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। হাসি ফুটিয়েছে নিজ পরিবারসহ প্রতিবেশীদের মুখেও। সহপাঠী থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষকদের কাছেও সমীহের পাত্রী হয়ে উঠেছে সামিয়া আক্তার শারমিন। কিন্তু চারদিকের এতো এতো উচ্ছ্বাস আনন্দের মাঝেও মেধাবী এ ছাত্রীর চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ, স্বপ্ন ভঙ্গের শঙ্কা।
সামিয়া মুখ ভরে স্বস্তির বাতাস টেনে নিয়ে বলে ওঠে, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল যেভাবেই হোক এসএসসিতে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল ছিনিয়ে আনা। অন্যথায় কোনোভাবেই আর পড়ালেখায় যুক্ত থাকা আমার সম্ভব হবে না। নয়তো বসতে হবে বিয়ের পিড়িতে, না হয় ঢুকতে হবে গার্মেন্টসের চাকরিতে। এ অবস্থায় পড়ালেখার মাঝেই নিজেকে উৎসর্গ করার মতো জীবন বেছে নেই আমি।’
নিজের শিক্ষা জীবনকে চলমান রাখার অদম্য বাসনায় সামিয়া দিনে-রাতে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত পড়াশুনার স্বতন্ত্র রুটিন বানিয়ে ফেলে। এরপরও হাসিমুখে সংসারের কাজকর্মে অংশ নিতো সে। তার শিক্ষা যেন কোনোভাবেই পরিবারে অতি আপনজনদের কাছেও বাধা বিরক্তির কারণ না হয়- সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতো সামিয়া। এসএসসি পরীক্ষা তার কাছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের মতোই ছিল। শান্ত কণ্ঠে সামিয়া বলে, ‘আল্লাহর অশেষ ভাগ্যে জুটেছে আমার- এসএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতাও মিলেছে পরিবারে। কিন্তু এখন আটকে যাচ্ছি আরেক অনিশ্চয়তার অন্ধকারে।’
অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি হওয়া যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, তেমনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন সাধও মিইয়ে যেতে শুরু করেছে। বাবা মায়ের অতি সামান্য আয়ে সংসারের চাকা যেখানে ঘুরতে চায় না, সেখানে মেয়েকে কলেজে ভর্তি ও পড়াশুনা চালিয়ে নেয়ার সাধ্য কোথায়? এ যেন বাবা হাবিবুর রহমানের কাছে আকাশ ছোঁয়ার মতো অকল্পনীয় ব্যাপার। এমন দিশেহারা পরিস্থিতিতে মেধাবী ছাত্রী সামিয়া আক্তার শারমিনের পাশে এগিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিআরএ)।
সিআরএ সভাপতি সোহাগ আরেফিন এবং সংগঠনের সহ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ রবিউল হোসেন যোগাযোগ করেছেন সামিয়ার পরিবারের সাথে। চট্টগ্রামের সাংবাদিক সংগঠনটি এখন অদম্য সামিয়ার স্বপ্ন জয়ের সারথি। তার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন সাধের প্রতিটি ধাপে অভিভাবকত্বের ছোঁয়া রাখতে চায় সিআরএ। মেধাবী সামিয়া এখন প্রাণ খুলে হাসে, উচ্ছ্বাসে উড়ে বেড়ায়। তার চোখ মুখ থেকে দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তার অন্ধকার যেন এক লহমায় উবে গেছে। সামিয়ার ভাষায়: ‘পা দিচ্ছি কলেজে, পাশেই আছে সিআরএ- আমার স্বপ্ন জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সকলের আশীর্বাদ আমার আগামীর সাফল্যকে ত্বরান্বিত করবে ইনশাআল্লাহ।’
পাশে দাঁড়ানোর আনন্দে সামিয়ার চেয়েও বেশি উচ্ছ্বাসে আছেন সিআরএ’র সাথে সম্পৃক্ত সাংবাদিকরা। সংগঠনটির সভাপতি সোহাগ আরেফিন বলেন, ‘সামিয়া আক্তার শারমিন হচ্ছে সিআরএ’র মডেল কন্যা। আগামীর সাফল্য আর স্বপ্ন জয়ে সামিয়ার ছায়া হয়ে থাকবে চট্টগ্রামের এ সাংবাদিক সংগঠন- এটাই সবচেয়ে শান্তিময় তৃপ্তি।’
সিআরএ’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খোকন বলেন, পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিআরএ) গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণ কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। সিআরএ অদম্য সামিয়ার পাশে দাঁড়াতে পেরে আজ আনন্দিত। সমাজের বিত্তবানদেরও সামিয়ার পাশে দাঁড়ানো আহ্বান জানান তিনি।
এসময় সিআরএ সহ সভাপতি রাজু আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের রাজু, সদস্য শহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: রুবেল, দপ্তর সম্পাদক মো: আশরাফ উদ্দিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাকিল, সহ দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ রবিউল হোসেন, সদস্য জহির উদ্দীন বাবর সহ আরো অনেকেই।