ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়া শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে আলোচনায় থাকা সামিট গ্রুপের দুটি কোম্পানির লভ্যাংশ হস্তান্তরের সময় এক হাজার কোটি টাকার বেশি উৎসে কর ’ফাঁকির’ তথ্য ‘উদঘাটন’ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সাত করবর্ষ ধরে লভ্যাংশ হস্তান্তরের সময় উৎসে কর না কাটায় তা এখন জরিমানাসহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা; যা ’ফাঁকি’ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সরকারের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটির সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এর। সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দুটি কোম্পানির কাছ থেকে বড় অঙ্কের এ রাজস্ব আদায়ে এখন পদক্ষেপ নেবে সিআইসি, যেটিকে দেশের ‘সবচেয়ে বড় উৎসে কর ফাঁকি’ হিসেবে বলেছেন এক কর্মকর্তা। খবর বিডিনিউজের।
এ কর আদায় করা হবে কি না কিংবা কীভাবে আদায় করা হবে জানতে চাইলে ঢাকার কর অঞ্চল–২ এর কমিশনার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, ‘আমরা এখন কালেকশনে যাব। এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশনা রয়েছে, আমরা কালেকশনে যাব। কালেকশনের যে পদ্ধতিগুলো রয়েছে, দ্যাট উইল বি অ্যাপ্লাইড।’
সিআইসি করবর্ষ ২০১৭–১৮ থেকে ২০২৩–২৪ পর্যন্ত তথ্য অনুসন্ধান ও যাচাই বাছাই করে দেখেছে, সামিট পাওয়ার এটির বিনিয়োগকারী কোম্পানি সামিট করপোরেশনকে লভ্যাংশ দেওয়ার সময় উৎসে কর কাটেনি। তবে ঠিকই অন্য কোম্পানি বা বিনিয়োগকারীদের এসময়ে লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ২০ শতাংশ হার উৎসে কর কেটেছে কোম্পানিটি। একই ঘটনা ঘটেছে সামিট করপোরেশন থেকে সিঙ্গাপুরের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালে লভ্যাংশ দেওয়ার বেলায়। এক্ষেত্রে পাঁচ কর বছরে ১৫ শতাংশ হারে ‘প্রযোজ্য’ উৎসে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সিআইসি’র। আগের সরকারের সময়ে সার্কুলার করে সামিট পাওয়ার থেকে সামিট করপোরেশনে এবং সামিট করপোরেশন থেকে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালে শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উৎসে কর ‘প্রযোজ্য হবে না‘ বলে স্পষ্ট করা হয়েছিল। ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকার এ সময়ে এনবিআর আগের দেওয়া ‘স্পষ্টীকরণ’ বাতিল করে নতুন করে উৎসে কর প্রযোজ্য হবে বলে ‘স্পষ্টীকরণ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনবিআর ও সিআইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আগের সরকারের সময়ে বিশেষ সুবিধা দিয়ে উৎসে কর ’ফাঁকি দেওয়ার’ এ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল।
বড় অঙ্কের উৎসে কর ‘ফাঁকি’র বিষয়ে বক্তব্য জানতে সামিট গ্রুপ ও সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আজিজ খানের হোয়্যাটসঅ্যাপে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। মেসেজে প্রশ্ন লিখে পাঠানোর হলেও তার উত্তর মেলেনি।
তবে সামিট ইন্টারন্যাশনালের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করা হয়, তাদের কোম্পানি কখনও কোনো কর ফাঁকি দেয়নি। আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তারপর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যা করা দরকার আমরা তা করব। আমরা সবসময় আইন মেনে চলেছি এবং চলব।’