সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে চিকনদন্ডী ভূমি অফিস

গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড ও নথিপত্র নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দ্বিতল ভবন করার দাবি

হাটহাজারী প্রতিনিধি | শনিবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ভূমি অফিসটি সামান্য বৃষ্টিতেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে যায়। চট্টগ্রামহাটহাজারী মহাসড়ক সংলগ্ন পানি নিষ্কাশনের নালার পাশে এই গুরুত্বপূর্ণ অফিসটি অবস্থিত। স্থান বিশেষে নালা/ছড়া অবৈধ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ঢলের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুমে এই অবস্থা হয়ে থাকে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। এতে করে দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজের সীমাহীন ব্যাঘাত ঘটে বলে জানান তারা।

জানা যায়, চিকনদন্ডী ইউনিয়ন তহশিল অফিসটি ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত ফতেয়াবাদ সাবরেজিস্ট্রার অফিস সংলগ্ন এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ভাড়া ভবনে ছিল। সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ অফিসটি নিজস্ব জায়গায় হস্তান্তর করতে তৎকালীন হুইপ প্রয়াত সংসদ সদস্য সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চার শতক জায়গায় উপর বর্তমান স্থানে নির্মাণ করে ভবনটি উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় ভাড়া ভবন থেকে অফিস হস্তান্তর না করার জন্য দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। বেশ কয়েক বছর কোনো সমস্যা না হলেও ক্রমান্বয়ে স্থানীয় পানি নিষ্কাশনের পথ ভরাট ও অবৈধ দখল হওয়ার কারণে সমস্যা দেখা দিতে থাকে। বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে যায় চিকনদন্ডী ভূমি অফিস। গত শনিবার মধ্য রাতের টানা বর্ষণে পশ্চিমের পাহাড়ের পানির ঢল ভূমি অফিসে ঢুকে পড়ে। গত রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসের ভেতর সাড়ে চার ফুট পানি স্থায়ী ছিল। একইসাথে বড় দিঘিরপাড়স্থ চট্টগ্রামখাগড়াছড়ি মহাসড়কও কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। খবর পেয়ে পানি ডিঙিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রোববার খুব সকালে এই অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কর্মস্থলে গিয়ে অফিসের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড নিরাপদে সরিয়ে নেন। তবে কয়েক বছর ধরেই অফিস শেষে রেকর্ডসহ যাবতীয় রেজিস্টার নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করায় কোনো ক্ষতি না হলেও অফিসের আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বছর বছর পাহাড়ি ঢলের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। গেল বছর তিন ফুট উচ্চতায় রেকর্ডসমূহ সংরক্ষণ করা গেলেও এবার প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতায় তা সংরক্ষণ করতে হয়েছে।

এ বিষয়ে অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢলের পানি অফিসে ঢুকে পড়ে। পানির উপর দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে সেবা দিতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। তাছাড়া অফিসটি নালার সঙ্গে লাগোয়া হওয়ায় একদিকে মশার উপদ্রব অপরদিকে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব দেখা যায় অনেক সময়। গত মঙ্গলবার ছাদের সিলিং থেকে সাড়ে চার ফুট লম্বা বিষাক্ত একটি সাপ অফিস সহায়কের গায়ের উপর পড়ে। মুহূর্তে সেবাগ্রহীতাসহ সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থিত ও অফিসের লোকজন কোনোমতে সাপটিকে কৌশলে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। অফিসে কর্মরতদের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডসমূহ সংরক্ষণ করা। যদি পানিতে কোনো রেকর্ড নষ্ট হয় তাহলে সাতটি মৌজার মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়বে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান জানান, ইতিমধ্যে দ্বিতল ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে বলেন, নিয়মনুযায়ী একটা দ্বিতল ভবনের জন্য কমপক্ষে ১০ শতক জায়গার প্রয়োজন হয়। সেখানে মাত্র চার শতক জায়গা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হুমকি
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনার প্রশংসা, প্রত্যাবাসনে গুরুত্ব