সামাজিক জীবনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে চাই সচেতনতা

বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস আজ

ইমাম ইমু | মঙ্গলবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সাদাছড়ি সমাজের সবার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে যে ব্যক্তিটির সহায়তা প্রয়োজন। সাদাছড়ি হলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির পথচলার সহায়ক। সাদাছড়িকে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা নিজের চোখ বলে মনে করে থাকেন। যা তাদের জন্য এক পরোক্ষ দৃষ্টিশক্তি। সাদাছড়ি দৃষ্টিহীনকে নিয়ে এগিয়ে যায় আপন গন্তব্যে। নিরাপত্তা বলতে বোঝায় দৃষ্টিহীন ব্যক্তির সব ধরনের অধিকারের নিরাপত্তা। অর্থাৎ দৃষ্টিহীনের শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন, কর্মসংস্থান, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, মতপ্রকাশসহ সব ধরনের মৌলমানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা।

আজ বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘হাতে দেখলে সাদাছড়ি, এগিয়ে এসে সহায়তা করি’। এই দিবসকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরে দুইটি কর্মসূচি রয়েছে। প্রথমটি সকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে; দ্বিতীয়টি বিকালে লায়ন্স, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরশ এবং ইপসার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে।

জানা যায়, ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়। অন্ধ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং অন্ধত্ব এবং স্বাধীনতার হাতিয়ারের প্রতীক, সাদা বেতের লোকদের কৃতিত্ব উদযাপনের জন্য তারিখটি আলাদা করা হয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালন করে।

লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের হিসাব মতে, বিশ্বে ২৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ পুরোপুরি ও আংশিকভাবে চোখে দেখে না। এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ চলাচলের জন্য হাতে সাদাছড়ি ব্যবহার করে থাকে, যারা চোখে দেখে তারা যাতে তাদের চলাচলে সহযোগিতা করে। নিরাপদে সড়কে ও অন্যান্য স্থানে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতীক হিসেবে সাদাছড়ির ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস২০২২) হিসাবে দেশে বর্তমানে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ৪৭ দশমিক ৪২ লাখ। এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ০.৩৯ শতাংশ বা ১৬ লাখ ২৫ হাজার। এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের নিরাপদে সড়ক ও অন্যান্য স্থানে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতীক হিসেবে সাদাছড়ি ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিশেষত শিশু শিক্ষা এবং পরবর্তী জীবনধারায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দিবসটি খুবই তাৎপর্য বহন করে।

২০২২ আদমশুমারি তথ্য মতে, প্রায় চার লাখের বেশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু (সম্পূর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, আংশিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং ক্ষীণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী) রয়েছে। এর মধ্যে যারা সম্পূর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাদের জন্য বিদ্যমান সরকারি পাঁচটি বিশেষায়িত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ছাড়া সরকারিভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো স্কুল নেই, যেখানে অন্ধ বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা পড়াশোনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য এক যুগের বেশি সময় ধরে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তি, বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিশেষায়িত বিদ্যালয়গুলোর সরকারি স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে যুগান্তকারী ফলাফল এনে দিতে পারে।

চট্টগ্রাম নগরে দৃষ্টিহীন এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরশ। পরশের সভাপতি মো. আল আমিন আজাদীকে বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা কাজ করে থাকি। বিশেষ করে তাদের শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে আমরা কাজ করে থাকি। আমরা ২০১৯ সাল থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। প্রতিবন্ধীদের কেউ বিপদে পড়লে, কারো অধিকার হরণ হলে বা প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করে থাকি। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সরঞ্জাম, হুইল চেয়ার বিতরণসহ শিক্ষার ক্ষেত্রে যাবতীয় সহযোগিতা করা হয়। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করে থাকি। শিক্ষার্থীদের বুঝানো হয় যে সাদাছড়ি হাতে দেখলে হবে বুঝতে হবে ব্যক্তিটির সাহায্য প্রয়োজন বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি। সাদাছড়ি দৃষ্টিহীনের জন্য চোখ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অনেকে এটাকে খুব হালকা হিসাবে মনে করেন কিন্তু এটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন দৃষ্টিহীনের জন্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে
পরবর্তী নিবন্ধরাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল চান প্রধান উপদেষ্টা