সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা চাই

| শনিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে ‘মানব সম্পদ উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব আলোচনা সভায় বক্তারা মানব সম্পদের উন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, মানুষের মনের উৎকর্ষ সাধনই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
মানব সম্পদ হলো দেশের জনসাধারণ। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম উপকরণ হলো মানব সম্পদ। মানব সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ অগ্রসর হয়, সমৃদ্ধি লাভ করে এবং তার ওপর ভিত্তি করে দেশের অবস্থানের পরিমাপ চলে।
মানব উন্নয়নের সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচনের সম্পর্ক রয়েছে। দারিদ্র্য ও উন্নয়ন সংজ্ঞায়িত করা ও পরিমাপ করার ক্ষেত্রে গত চার দশকের গবেষণায় বেশ পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। ‘দারিদ্র্য’ ও ‘উন্নয়ন’ এখন আর মাথাপিছু আয়ের ব্যাপার নয়, এর সাথে ‘মানব উন্নয়নের’ ও ‘মানবিক উন্নয়নের’ সকল মাত্রা সমন্বিত হয়েছে। মানব উন্নয়ন ব্যাপারটা বিশেষ করে যারা বহিঃস্থ বঞ্চিত অর্থাৎ দরিদ্র, নারী এবং যুবক তাদের পরিপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টির সমার্থক। মানুষ যে সব সত্যিকারের স্বাধীনতা উপভোগ করে সেগুলোর সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াই মানব উন্নয়ন। কাজেই মানব উন্নয়নের সঙ্গে সহজাত যোগ রয়েছে ‘একীভূতকরণের’ ধারণা। এটি শুধু সম্পদের সঙ্গে যুক্ত নয়। এর সঙ্গে অনেক ব্যস্টিক এবং সামাজিক অধিকারের প্রশ্ন জড়িত।
অন্যদিকে, মানব উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অর্থনীতিবিদ ও নীতি-বিশ্লেষকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্থের মাপকাঠিতে দারিদ্র্যকে মাপতে চান। ধরে নেওয়া হয়, ব্যক্তির জীবনযাত্রার বৈষয়িক মানদণ্ডই তার অবস্থার উন্নতি নির্দেশ করে। ব্যক্তির উন্নয়ন মানে রাষ্ট্রের উন্নয়ন হিসেবে পরিগণিত করে সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতি সাধনে প্রয়াস চালানো হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানবজাতির উন্নয়ন ছাড়া ‘মানব উন্নয়ন’ সম্ভব নয়। উন্নয়নকে একটি নৈতিক প্রত্যয় হিসেবে মেনে নিয়ে অনেকেই এর যে বিষয়গত সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা হচ্ছে ‘কাম্য পরিবর্তনই হচ্ছে উন্নয়ন’। এই অর্থে ‘মানব উন্নয়ন’ হচ্ছে ‘মানব নির্ধারিত মানবের কাম্য পরিবর্তন।’ কোনো পরিবর্তনকে উন্নয়ন বলার জন্য ঐ পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট অধিকাংশের চাওয়াটা একটা অনিবার্য পূর্বশর্ত হতে পারে, কিন্তু যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়। পরিবর্তনশীল মানুষের পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয় কাম্যতাই হচ্ছে উন্নয়নের আধেয়। আরো স্পষ্ট করে যদি বলতে হয়, তাহলেই বলি- মানব সম্পদ উন্নয়নের অর্থ হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নত হওয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হওয়া, যাতে দক্ষ জনশক্তি সমাজে ও বিশ্বে তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারে এবং সমাজে তাদের চাহিদা সৃষ্টি হয়। মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিশ্বের অনেকগুলো দেশ আছে, যে সব দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অফুরন্ত। অন্যদিকে, জাপান বলতে গেলে প্রাকৃতিক সম্পদহীন একটি দেশ। তারপরও কারিগরি শিক্ষায় অগ্রসর হওয়ার কারণে দেশটি বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশের মর্যাদা পাচ্ছে। তাই নিঃসঙ্কোচে বলা যায়, কারিগরি শিক্ষা ছাড়া জনদক্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন জাতিকে সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে।
আমরা লক্ষ্য করি, সরকার মানব সম্পদ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে চলেছেন। সেই লক্ষ্যে বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেমন : দেশে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে জাতীয়করণ করা, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপন করে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পর্কিত লোকজনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা উপযোগী করে গড়ে তোলা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এ বিষয়ে অধিকতর শিক্ষা প্রদান প্রভৃতি।
মানব সম্পদের উন্নয়ন হলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে নিঃসন্দেহে। কৃষি ও শিল্পখাতে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করা সম্ভব হবে। আর সেই দক্ষতাই হলো উৎপাদন বৃদ্ধির চাবিকাঠি। মানব সম্পদ উন্নয়নে সরকার যে বাজেট বরাদ্দ করেছে, তা আরো বৃদ্ধি করা দরকার। কেননা, আজকের উন্নত বিশ্বই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দক্ষ মানব শক্তির আবির্ভাব ছাড়া রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে