সাভারে গ্রেপ্তার ৩, দুজনের স্বীকারোক্তি

রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি-যৌন নিপীড়ন বড়াইগ্রাম থানার ওসি প্রত্যাহার ও মির্জাপুর থানার এক এএসআই সাময়িক বরখাস্ত

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুক্রবার সকালে বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ৮ থেকে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাতে ঢাকার সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) ও ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮)। এদিকে এ ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার এবং মির্জাপুর থানার এএসআই মো. আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

গ্রেপ্তার ২ যুবকের স্বীকারোক্তি : গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে দুই যুবক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্র্রেপ্তার অন্য একজনকে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই আহসানুজ্জামান জানান। তিনি বলেন, শনিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নওরিন করিম। স্বীকারোক্তি দেওয়া দুজন হলেন মো. সবুজ ও মো. শরীফুজ্জামান শরীফ। গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

মুহিত দুটি বাসসহ আরো পাঁচটি ডাকাতি মামলার আসামি বলে জানান ডিবির এসআই আহসানুজ্জামান। তিনি বলেন, স্বীকারোক্তিতে ওই দুই যুবক আদালতকে বলেছেন, মুহিত ও তারা দুজন ছাড়াও ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় শ্যালকদুলাভাইসহ আরো চারজন ছিলেন। বাসে ডাকাতির সময় দুজন নারী যাত্রীর কাছ থেকে গহনা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তাদের হেনস্তা করেন তারা।

এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস নামের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি এবং ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি (ময়মনসিংহ১১০০৬১) বাস ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এ সময় বাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। রাত ১২টার দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে এবং হেমায়েতপুর থেকে আরও ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি আবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

বাসটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে চাবিরতির জন্য থামে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বিরতির সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও তিন থেকে চার জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বাসটি। রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ ৮ থেকে ৯ জন যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে।

মামলায় বলা হয়, তাদের মধ্যে তিনজন ডাকাত গাড়ি চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে টানাহেঁচড়া করে কিলঘুষি মেরে তাকে উঠিয়ে নিয়ে পেছনে উল্টা করে রাখে। ডাকাতদের মধ্যে থেকে একজন চালকের আসনে বসে বাসটি নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বাসটি চালিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। পরে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া সাকিন এলাকার ফুটওভার ব্রিজের কাছে পৌঁছে ডাকাত দলের সদস্যরা লুটপাট শুরু করে।

এ সময় যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও রূপাসহ সকল মালামাল ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা গাড়িটি দেলদুয়ার উডজেলার নাটিয়াপাড়ায় গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। এভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা যাত্রীদের মালামাল লুট ও নারীদের শ্লীলতাহানির পর আশুলিয়ার নন্দন পার্ক এলাকায় নেমে যায়। পরে চালক গাড়ি নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে যাত্রীরা জরুরি সেবা ৯৯৯এ ফোন করে পুলিশকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। টহল পুলিশ মির্জাপুর থানায় বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন।

তারা মির্জাপুর থানায় সেবা না পেয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে জানান। পুলিশ চালক, বাসের সুপারভাইজার ও সহকারীকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠায়। পরে তারা ওইদিনই জামিনে মুক্তি পান বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন সোর্স ব্যবহার করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

তিনি বলছেন, ওই বাসে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বড়াইগ্রামের ওসিকে প্রত্যাহার : বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকালে তাকে নাটোরে পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান।

রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানীর ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে সেবা পাননি, যে কারণে তাকে (ওসিকে) প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওসির দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিষয়টি ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করেছে।

মির্জাপুর থানার এএসআই বরখাস্ত : বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মির্জাপুর থানার এএসআই মো. আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন এএসআই আতিকুজ্জামান ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন।

জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে ভুক্তভোগী কয়েকজন বাসযাত্রী মির্জাপুর থানায় এসে চলন্ত বাসে ডাকাতির বিষয়ে ডিউটি অফিসার আতিকুজ্জামানকে অবহিত করেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় কয়েক মিনিট পর তারা থানা ত্যাগ করেন। এছাড়া ডিউটি অফিসার তাদের নামঠিকানা বা মোবাইল নাম্বারসহ কোনো তথ্যই রাখেননি। যে কারণে মামলা নিতে বিলম্ব হয়। এরপর ঘটনার তিন দিন পরে এক বাসযাত্রী অমর আলী মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।

এএসপি এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এএসআই আতিকুজ্জামানকে মির্জাপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেন। এরপর শনিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রাম আদালতে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে জোর
পরবর্তী নিবন্ধবোনের শ্বশুরবাড়িতে ‘মারধরে’ ভাইয়ের মৃত্যু