চট্টগ্রামে এক লাখ কোটিরও বেশি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড, ইকোনমিক জোন, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর, জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হচ্ছে দুই শতাধিক প্রকল্প। দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সরকার অকাতরে অর্থায়ন করছে এসব প্রকল্পে। কিন্তু সমন্বয়হীনতা এবং নানামুখী সংকটে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের উন্নয়নে অকাতরে অর্থ প্রদান করেছেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের সাথে জড়িত একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রামের কোন প্রকল্প উপস্থাপিত হলে তা কোনদিনই ‘না’ হয় না। চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। চট্টগ্রামের একের পর এক ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, আউটার রিং রোড প্রকল্প, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, অক্সিজেন কুয়াইশ থেকে শুরু করে কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প, পারকি সি বিচ উন্নয়ন প্রকল্প, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, বে টার্মিনাল নির্মাণ, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ, মাতারবাড়ি ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, শেখ হাসিনা -১ এবং শেখ হাসিনা-২ পানি শোধনাগার, শেখ রাসেল পানি শোধনাগারসহ অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বহু প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশেষ করে বন্দর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার কার্যক্রম চলছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আবাসন, শিল্পায়ন এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যেও বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পগুলোর অনেকগুলোই নানা কারণে ঝুলে রয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হচ্ছে না। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এতে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তিও চরমে উঠছে।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ প্রথাকে প্রধানতঃ দায়ী করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বহু প্রকল্পে মূল ঠিকাদার কাজ না করে সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় মূল ঠিকাদারের সক্ষমতা যাছাই করা হয়, কাগজপত্র দেখা হয়। কিন্তু মূল ঠিকাদার কাজ নেয়ার পর তিনি সাব কন্ট্রাক্টে যাদের নিয়োগ করেন তাদের কোন সক্ষমতা থাকে না। এতে করে কাজের গতি ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কিংবা অন্যান্য সংস্থার বহু কাজই মূল ঠিকাদার না করে সাব কন্ট্রাক্টে করানো হচ্ছে। এর মধ্যে একাধিক সাব কন্ট্রাক্টর পালিয়ে যাওয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজই বন্ধ থাকার ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র বলেছে, নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। আগ্রাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মর্মান্তিক প্রাণহানীর পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হলে এই ধরনের ভোগান্তি থেকে নগরবাসী রক্ষা পেতো। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা বলেছেন, অনেকদিন ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সুফল মিলবে। এই সুফলের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকালের ভোগান্তি মানুষ হাসি মুখে মেনে নেয়। কিন্তু তা কতদিন? মাসের পর মাস প্রকল্প ঝুলে থাকলে মানুষের ভোগান্তি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে সেই নজির স্থাপিত হয়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই ধরনের ভোগান্তির অবসান ঘটতো বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নানা সমস্যার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি সময় লাগছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যাপারে পিডিবির ওভারহেড কানেকশনগুলো বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে আমরা টাকা পয়সা দিয়ে রেখেছি। অথচ এখন পর্যন্ত লাইনগুলো স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। এতে করে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
সাদিয়ার মৃত্যুর জন্য কোনভাবেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দায়ী নয় বলে মন্তব্য করে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সাদিয়া যেখানে নালায় পড়েছে সেখানে স্ল্যাবও ছিল না। আমরা স্ল্যাব করে দিয়েছি। পুরো ড্রেনটিই অরক্ষিত ছিল। ড্রেনের ময়লা পরিস্কার করার দায়িত্ব সিডিএ’র নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অপর একটি সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ ঠেকানো গেলে কার্যক্রম ত্বরান্বিত এবং মানুষের ভোগান্তি কমে যেতো।