পুলিশ হেফাজতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদল নেতা মো. নুরুজ্জামান জনির মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জনির বাবা ইয়াকুব আলী গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ জানান, অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ৬২ জনকে আসামি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
১০ বছর আগে এ ঘটনায় এর আগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি মামলা হয়। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নুরুজ্জামান জনি। এ ঘটনায় গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলীর করা খিলগাঁও থানার মামলায় সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুযারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নুরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়েও নির্যাতন চালানো হয়।
বাদীর অভিযোগ, তখন নুরুজ্জামান জনির সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীয়স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় খোঁজেন। আসামিরা জনিকে আটক করেননি বলে দাবি করেন। দুদিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরও জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অভিযোগে বলা আরও হয়, ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার শুনতে পান। এক ব্যক্তির চিৎকার ও আর্তনাদ শুনতে পান। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষী ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পান দাবি করে অভিযোগে বলা হয়, তারা বলেন, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। বাদী ও সাক্ষীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন। তার পুরো শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করেন। মরদেহ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন বলেও বাদী অভিযোগ করেন।