দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন। ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিবির নেতৃত্ব দেন। খবর বিডি/বাংলানিউজের।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে’ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় বাংলাদেশের সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে।
তবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে আল–জাজিরা যখন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছিল, তখন সেনা সদর এবং সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা’ ও ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়েছিল। আজিজ আহমেদও সে সময় বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে, যাতে একটি ‘বিভ্রান্তির’ সৃষ্টি হয়।
কী ধরনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সে তথ্য জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদ নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হন। তাছাড়া অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনীর কাজ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। ম্যাথিউ মিলার বলছেন, বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে’ যুক্তরাষ্ট্রের যে অঙ্গীকার, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্য দিয়ে তা ‘পুনর্ব্যক্ত’ করা হল। সরকারি সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ সহজতর এবং স্বচ্ছ করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথাও বিবৃতিতে বলা হয়।
এমন কোনো অপরাধ করিনি যে শাস্তি পেতে হবে : এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। তার নিজের ও পরিবারের ওপর ওয়াশিংটন প্রশাসনের এ নিষেধাজ্ঞার খবরে আজিজ আহমেদ বলেন, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেটার সঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞা সম্পৃক্ত ওতপ্রোতভাবে। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর একটি বিবৃতি দেয়।
আজিজ আহমেদ জানান, এক বন্ধুর মাধ্যমে মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে বিষয়টি জেনেছেন তিনি। সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, সকালে আমার এক বন্ধু কপিটি পাঠিয়েছে। তার মাধ্যমেই বিষয়টি (নিষেধাজ্ঞা) জেনেছি। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে আজিজ আহমেদ বলেন, প্রথম অভিযোগ হলো– আমি আমার ভাইকে বাংলাদেশের যে আইন আছে, তার (ভাই) অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে সে যেন এড়িয়ে চলতে পারে, সেজন্য আমি আমার পদ–পদবি ব্যবহার করে তাকে সহযোগিতা করে করাপশন করেছি। এর উত্তর হলো– আমার সেই ভাই আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগেই বিদেশে। সে বৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করেই গিয়েছে। এখানে আমার পদ–পদবি ব্যবহার করে দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করেছি, এটা সঠিক নয়। ‘দ্বিতীয় অভিযোগ, আমি আমার ভাইকে মিলিটারি কন্ট্রাক্ট দিয়ে ঘুষ নিয়ে দুর্নীতি করেছি। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে আমি বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় আমার ভাইকে বা কোনো আত্মীয়কে কন্ট্রাক্ট দিয়েছি, এটা যদি প্রমাণ করতে পারে সেক্ষেত্রে আমি কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আজিজ আহমেদ বলেন, আমি এমন কোনো অপরাধ করিনি যে, শাস্তি পেতে হবে। তারা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছে তার কোনো প্রমাণ থাকলে আমাকে দিক। ’