সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী নজরুলসহ ৭৯ জনকে আসামি করে মামলা

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২০ আগস্ট, ২০২৪ at ৯:৪৫ অপরাহ্ণ

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রমের পুত্র অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর ২০১৮ সালে নির্বাচনী প্রচারণাকালে হামলা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, তার ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী মন্টু, চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জাব্বার চৌধুরী ও তার ভাই আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীসহ ৭৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এরমধ্যে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া চেয়ারম্যান পাড়ার মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র ও এলডিপি নেতা সরওয়ার জামাল বাদি হয়ে আজ মঙ্গলবার সাতকানিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহার মতে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রম চট্টগ্রাম-১৪ আসন থেকে ছাতা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।

ড. কর্নেল অলি আহমদের পুত্র অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী সাইক্লোন সেন্টারের পশ্চিম পার্শ্বের আলম কাজী জামে মসজিদ এলাকায় বাবার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিল। এসময় সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, তার ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী মন্টু, চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জাব্বার চৌধুরী, তার ছোট ভাই আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও হাবিবুর রহমানের নির্দেশে ও নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালায় এবং অধ্যাপক ওমর ফারুক সানিকে হত্যার চেষ্টা চালায়।

মামলার বাদি জানান, এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদের পুত্র অধ্যাপক সানির নেতৃত্ব আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রচার বহর নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছার সাথে সাথে পূর্বে থেকে ওৎ পেতে থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রথমে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলি চালিয়ে পুরো এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে।

এরপর তারা ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে কর্নেল অলি আহমদের পুত্র অধ্যাপক ওমর ফারুক সানিসহ প্রচারণায় অংশ নেয়া এলডিপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদেরকে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে।

এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ওমর ফারুক সানিকে হত্যার চেষ্টা চালায়। এছাড়াও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সন্ত্রাসীরা অ্যধাপক সানির ব্যবহৃত মোবাইল সেট, নগদ টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে হামলাকারীরা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে স্থানীয় লোকজন অধ্যাপক ওমর ফারুক সানিসহ আহত নেতা-কর্মীদেরকে উদ্ধার করে সাতকানিয়া, দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এ ঘটনায় সাতকানিয়ার কেঁওচিয়ার এলডিপি নেতা সরওয়ার জামাল বাদি হয়ে গতকাল সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, তার ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী মন্টু, চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জাব্বার চৌধুরী, তার ভাই আবদুল কাইয়ুম ছাড়াও চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান, বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত, কেঁওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ওচমান আলী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, উত্তর সাতকানিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক আবু ছালেহ শান, চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম সোহেল, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার মোহাম্মদ ইউনুচ, সাধারন সম্পাদক রিপন কান্তি দাশ সুজন, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ওসমান গনি সিকদারসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা এলডিপির সাধারন সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রমের পুত্র অধ্যাপক ওমর ফারুক সানির নেতৃত্বে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ছাতা প্রতীকের পক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারনা চালাচ্ছিলেন। এসময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়। ওই ঘটনার পর মামলা করার জন্য আমরা থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু থানার তৎকালীন ওসি আমাদের মামলা নেয়নি। এখন পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বরে কেঁওচিয়ার তেমুহনী এলাকায় এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদের পুত্র অধ্যাপক ওমর ফারুক সানিসহ এলডিপির নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় কেঁওচিয়ার এলডিপি নেতা সরওয়ার জামাল বাদি হয়ে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলাটি দায়ের করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ ২৫ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় খালে মাছ ধরতে নেমে কিশোরের মৃত্যু