চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে পলাতক আছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও মন্ত্রীরা। কেউ কেউ আবার দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। আওয়ামী সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে লন্ডনে মিলিয়ন ডলার পাচার ও বিপুল সম্পদ গড়ে তোলা সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।
সম্প্রতি লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হাঁটার দৃশ্য কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার আই–ইউনিটের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। ওই সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে লন্ডনেই এখন অবস্থান করছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আল–জাজিরার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট (আই–ইউনিট) এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে লন্ডনে ১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের বাড়িতে বসবাস করছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আল–জাজিরার অনুসন্ধান ইউনিটের সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান ও উইল থর্ন এ প্রতিবদেনটি করেছেন। খবর বাংলানিউজের।
সম্প্রতি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামানকে লন্ডনে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের ব্লকের পাশ দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। এছাড়া জানা গেছে, লন্ডনে ৯০ লাখেরও বেশি ডলারের ছয়টি বাড়ি আছে তার। যা সাবেক ওই মন্ত্রীর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছোট একটি অংশ।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও যুক্তরাষ্ট্রে সাইফুজ্জামানের আরও কয়েকশ অ্যাপার্টমেন্ট আছে। বিশেষ করে দুবাইয়ে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ধারণার চেয়েও বেশি। সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দের বিষয়ে দুদক ইতোমধ্যে আদালত থেকে আদেশ পেয়েছে। এর ফলে ওই দম্পতির মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্টগুলো আদালতের আদেশের আওতায় পড়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার মিলিয়নস’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে আল–জাজিরা জানায়, একাধিক দেশে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫০ কোটি ডলার। প্রতিবেদনে সাবেক ওই মন্ত্রীকে গর্ব করে আল–জাজিরার আন্ডারকভার সাংবাদিকদের বিভিন্ন দেশে তার সম্পদের বর্ণনা দিতে দেখা গিয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টিরও বেশি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন তিনি। আল–জাজিরার হাতে আসা তথ্যে দেখা যায়, দুবাইয়ে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিক ধারণার চেয়ে আরও বেশি।
২০২৩ সালে নতুন করে ফাঁস হওয়া সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান ইউএইতে ২৫০টির বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক। এই সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। রেকর্ডগুলোতে উঠে আসে যে, তার স্ত্রী রুকমিলা জামান দুবাইতে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের আরও ৫০টি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।
গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে সাইফুজ্জামান দুবাইয়ের অভিজাত অপেরা এলাকায় একটি পেন্টহাউসের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করেছিলেন। জমির রেকর্ড যাচাই করে আল–জাজিরা নিশ্চিত হয়েছে, তিনি সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক, এর মূল্য ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি।
নতুন তথ্যে দেখা গেছে, সাবেক ওই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী ইউএইতে ৩শ’টির বেশি উচ্চমূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন। আর সামগ্রিকভাবে ওই দম্পতি বিশ্বজুড়ে ৬শ’টির বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক। তাদের নামেই বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্ত চলছে।
বাংলাদেশের মুদ্রা আইনানুযায়ী, বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন নেই দেশের কোনো নাগরিকের। কিন্তু আল–জাজিরার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অফশোর সম্পদের বিবরণ ঘোষণা করেননি সাইফুজ্জামান। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কর আইন লঙ্ঘন করেছেন তিনি। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের পাশাপাশি বাংলাদেশ ছেড়ে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুদক।
এ অভিযোগ নিয়ে সাইফুজ্জামান আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বাইরে থাকা দীর্ঘদিনের বৈধ ব্যবসার অর্থ দিয়েই বিদেশি সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। তার দাবি, তিনি হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শিকারে পরিণত হয়েছেন।