সাবেক দুইমন্ত্রী ও ১০ এমপিসহ ২১৯ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে হত্যা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রামের ১০ জন সাবেক সংসদ সদস্যসহ ২১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন রাঙ্গুনিয়া থানার মাওলানা কবির আহমদ পাড়ার মৃত ফয়েজ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৪০)। বর্তমানে যিনি নগরীর আকবর শাহ থানাধীন বেলতলী ঘোনায় বসবাস করেন।

আইনজীবীর আবেদনে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ভিকটিম মুজিবুর রহমান সংক্রান্ত কোন মামলা রেকর্ড হয়েছে কিনা এবং মৃত ব্যক্তির লাশের সুরতহাল রিপোর্ট ও পোস্টমর্টেম করা হলে তাঁর কপিসহ ৭ (সাত) দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি’র আকবর শাহ থানার ওসিকে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী জিয়াউল হক জিয়া।

মামলার এজাহার ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল বিকেলে। আজ থেকে প্রায় ১৭ মাস আগে। যা সংঘটিত হয়েছে নগরীর আকবর শাহ থানাধীন বেলতলী ঘোনার অগ্রণী হাউজিংয়ের পাহাড়ে।

এতে বাদি এজাহারে অভিযোগ তোলেন-মামলার আসামিরা কেউ দলনেতা, কেউ সহযোগী, আর কেউ হুমুকদাতা এবং ইন্ধনদাতা হন। ঘটনার দিন বেলতলী পাহাড়ে বাদী ও অপরাপর শ্রমিকেরা আসামিদের পরস্পরের নির্দেশে পাহাড় কাটতে থাকেন। এক সময় পাহাড় ধসে পড়ে বাদী এবং ভিকটিম মুজিবুর রহমান (৩৫) সহ আরো ৪-৫ জন মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থল থেকে বাকিদের উদ্ধার করা হলেও ভিকটিম মুজিবুর রহমানের মৃত্যু হয়।

ভিকটিমের পরিচয়ে জানানো হয় নিহত মুজিবুর রহমান আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ কলোনীর বেলতলী ঘোনা ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেন।

এজাহারে জানান, আসামিরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও কমিশনার হওয়ায় ভিকটিমের স্ত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করে থানায় অপমৃত্যু দায়ের করার কথা বলে কোন ধরনের মামলা রুজু করেননি। অথচ আসামিদের অনিহার কারণে ভিকটিম মুজিবুরের মৃত্যু ঘটে।

এতে মামলার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—রাউজানের সাবেক এমপি এ বি এম ফজলুল কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম- ২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, চট্টগ্রাম ৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম, চট্টগ্রাম ৪-সীতাকুণ্ড আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাঁচলাইশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোতালেব, রাঙামাটি জেলার ২৯৯ নম্বর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার ও নোয়াখালী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম।

এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ সালাম ও এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম, এলবিয়ন গ্রুপ ও ডেল্টা হসপিটালের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত, রাউজানের ফারাজ করিম চৌধুরী, ফটিকছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব, চসিকের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল ইসলাম, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, নোয়াখালী জেলার সেনবাগ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু জাফর মোহাম্মদ টিপু, ড. হাছান মাহমুদের এপিএস কায়সার ও হিমুসহ ২১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাদি পক্ষের আইনজীবী জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘ভিকটিমের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট ও পোস্টমর্টেম করা হলে তাঁর কপিসহ ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আকবর শাহ থানার ওসিকে। বাকিটা প্রতিবেদন আসার পর শুনানি হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যাপসিকাম চাষে কৃষকের আগ্রহ
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে চলছে ৭২ ঘন্টার সড়ক অবরোধ