সাবেক এমপির বিলাসবহুল ল্যান্ডক্রু্‌জার লাখ টাকায় কিনতে চান ক্রেতা!

নিলামে সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩ কোটি ১০ লাখ

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্যদের (এমপি) ফেলে যাওয়া বিলাসবহুল গাড়িতে সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। নীলফামারী৩ আসনের সাবেক এমপি মো. সাদ্দাম হোসাইন পাভেল এবং খুলনা৩ আসনের এসএম কামাল হোসাইনের গাড়িতে এই দর হাঁকেন এসএম আরিফ নামের এক ব্যক্তি। শুধু তাই নয় গাজীপুর৫ আসনের সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান এবং যশোর২ আসনের সাবেক এমপি মো. তৌহিদুজ্জামানের গাড়িতে মহসীন মোহাম্মদ কবীর নামের এক ব্যক্তি মাত্র ১ লাখ টাকা দর হাঁকেন। অথচ চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কমুক্ত আসা প্রতিটি গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। কাস্টমস কর্তারা বলছেন, নিলামের স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী প্রথমবার কোনো পণ্য নিলাম তোলা হলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্যের ৬০ শতাংশ বা তার বেশি দর উঠতে হবে। সেই হিসেবে প্রতিটি গাড়ির ন্যূূনতম দর উঠতে হবে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তাই আইন অনুযায়ী এসব গাড়ির কেউ পাচ্ছেন না সেটি একপ্রকার বলা যায়। তবে কাস্টমসের নিলাম কমিটি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এমপিদের বিলাসবহুল ২৪ গাড়িসহ মোট ৪৪ গাড়ির নিলামে ২৭ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে গত রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে দরপত্র গ্রহণ করা হয়। নিলামের ৪৪ গাড়িতে মোট দরপত্র পড়ে ১৩৭টি। এছাড়া সাবেক এমপিদের ২৪ গাড়ির মধ্যে দরপত্র পড়েছে ১৪টিতে। তবে সবচেয়ে বেশি ২০টি দরপত্র পড়েছে ২০১৯ মডেলের টয়োটা এস্কোয়ারে, ২০১৮ মডেলের একটি টয়োটা হ্যারিয়ারে জমা পড়েছে ১৩টি ও ২০২০ মডেলের একটি টয়োটা হ্যারিয়ারে ৯টি দরপত্র জমা পড়েছে।

নিলামে রংপুর১ আসনের সাবেক এমপি মো. আসাদুজ্জামানের গাড়িতে সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হাঁকে ঢাকার ইজি সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নগরীর জামালখানের মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি ৫০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রামের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ দর হাঁকে ৩০ লাখ টাকা।

সুনামগঞ্জ৪ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ সাদিকের গাড়িতে সর্বোচ্চ দর ২ কোটি ১০ লাখ টাকা হাঁকিয়েছেন ফারাজ আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তি। এছাড়া কনকর্ড প্রগতি কন্সট্রাকশন ৫২ লাখ ৫৫ হাজার, অ্যাই কন্সট্রাকশন ৩৫ লাখ ৫০ হাজার, রেডিয়েন্ট বিজনেস কনসর্টিয়াম লিমিটেড ৩০ লাখ এবং ফারজানা ট্রেডিং ২ লাখ টাকা দাম দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ২ আসনের সাবেক এমপি জন্নাত আর হেনরির গাড়িতে এসএ ট্রেডিংয়ের সর্বোচ্চ দর ৫ লাখ টাকা এবং ফারজানা ট্রেডিংয়ের দর হাঁকে ২ লাখ টাকা। গাইবান্ধা২ আসনের শাহ সরোয়ার কবিরের গাড়িতে তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৩০ লাখ টাকা ও এসএ ট্রেডিং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর দিয়েছে। বগুড়া৫ আসনের মো. মজিবুর রহমান মঞ্জুর গাড়িতে ল্যাবএইড লিমিটেড ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যশোর২ আসনের মো. তৌহিদুজ্জামানের গাড়িতে ফারজানা ট্রেডিং ২ লাখ টাকা, খুলনা৩ আসনের এসএম কামাল হোসাইনের গাড়িতে ভ্যানগার্ড গার্মেন্টস ২ কোটি ৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা দর দিয়েছে। নীলফামারী৩ আসনের মো. সাদ্দাম হোসাইন পাভেলের গাড়িতে ক্রয়ডনকাউলুন ডিজাইন ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং কেডিএস গার্মেন্টস ৩০ লাখ টাকা দর হাঁকে। অপরদিকে ময়মনসিংহ৭ আসনের এবিএম আনিসুজ্জামানের গাড়িতে আল জাজিরা ট্রেডিং দর হাঁকে ৫ লাখ টাকা। নেত্রকোনা৪ আসনের সাজ্জাদুল হাসানের গাড়িতে একমাত্র দরদাতা কেডিএস গার্মেন্টস। তাদের হাঁকানো দর ৩০ লাখ টাকা। মহিলা আসনের তারানা হালিমের গাড়ি এস এ ট্রেডিং ৫ লাখ টাকা দর দিয়েছে। মহিলা আসনের শাম্মি আহমেদের গাড়িতে কেডিএস গার্মেন্টস ৩০ লাখ টাকা, ফারজানা ট্রেডিং ৫ লাখ টাকা এবং এস এ ট্রেডিং ৫ লাখ টাকা দাম উঠেছে। এদিকে ১০ সাবেক এমপির গাড়ি কেনায় কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তারা হলেনব্রাহ্মণবাড়িয়া১ আসনের এসএকে একরামুজ্জামান, জামালপুর৫ আসনের মো. আবুল কালাম আজাদ, ফরিদপুর২ আসনের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ময়মনসিংহ১১ আসনের মো. আব্দুল ওয়াহেদ, চট্টগ্রাম১৫ আসনের আব্দুল মোতালেব, মহিলা আসনের সানজিদা খানম, ঢাকা৭ আসনের মো. আলী আরাফাত, নওগাঁ৩ আসনের সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ঢাকা১৯ আসনের মো. সাইফুল ইসলাম এবং মহিলা আসনের রুনু রেজা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সাবেক ২৪ গাড়িতে দরপত্র জমা পড়েছে ১৪টিতে। এসব গাড়িতে অবশ্য প্রত্যাশিত দর পড়েনি। তবে সামগ্রিক বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো : সেনা সদর
পরবর্তী নিবন্ধরোগী দেখে চিকিৎসকদের নেওয়া টাকার রশিদ চান অর্থ উপদেষ্টা