পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের হাজার কোটি টাকার স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের দলিল, চুক্তিপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বোঝাই দু্ইটি বস্তা জব্দ করার কথা জানিয়েছে দুদক। রাজধানীতে শহীদুল হকের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গত মঙ্গলবার রাতে এসব আলামত উদ্ধার করা হয় বলে দুদকের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ বলেছেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ওই আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালিয়েছে। দুটি বস্তায় মোট ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামতের মধ্যে তার গড়া মজিদ–জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে ১৫টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ও তার স্থাবর সম্পদের ২৮টি দলিল থাকার কথা বলেছে সংস্থাটি। খবর বিডিনিউজের।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, শহীদুল হক তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য সংবলিত নথিপত্র এক নিকটাত্মীয়ের কাছে দুটি বস্তায় ভরে পাঠিয়েছিলেন বলে তুলে ধরেন আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, তল্লাশিকালে দুটি বস্তায় মোট ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামত পাওয়া যায়। যার মধ্যে সম্পত্তির দলিল, বিভিন্ন গোপনীয় চুক্তিপত্র, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, সংঘ স্মারকের ছায়ালিপি, অফার লেটার ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী উল্লেখযোগ্য।
অভিযানে অংশ নেওয়া দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিরপুর–১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসায় তারা এই অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে শহীদুল হকের ছোট বোনের ননদ সম্পর্কীয় একজনের বাসা থেকে বস্তা দুটি উদ্ধার করা হয়। অভিযানে শহিদুল হকের গড়া মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরের নথি পাওয়া গেছে তুলে ধরে দুদক কর্মকর্তা বলেন, ফারমার্স ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে শহীদুল হকের নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বড় অঙ্কের অর্থ জমা থাকার তথ্যও পেয়েছেন তারা। নথিপত্রে মধ্যে, মজিদ–জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিনটি শাখায় ৫ কোটি ৫০ লাখ, ফারমার্স ব্যাংকের আটটি হিসাবে ৪ কোটি ৭০ লাখ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চারটি হিসাবে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার এফডিআর থাকার আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে এই ফাউন্ডেশনের নামে প্রায় অর্ধশতাধিক সঞ্চয়ী হিসাব ও এফডিআরের নথিপত্র পাওয়া কথা বলেছেন দুদক কর্মকর্তা।
শহীদুল হকের গোপন করা দুটি বস্তায় বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদের দলিল পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাতটি দলিল, ঢাকা সদরের পাঁচটি, উত্তরার দুইটি, কেরানীগঞ্জের দুইটি, মোহাম্মদপুরে দুইটি, নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ ও ফতুল্লার ১০টিসহ ২৮টি দলিল পাওয়ার তথ্য দিয়েছেন দুদকের এই কর্মকর্তা। সাবেক এই আইজিপির একটি ব্যক্তিগত ৭৯ পাতার ডায়েরি পাওয়ার কথা তুলে ধরে দুদক কর্মকর্তা বলেন, এই ডায়েরিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য নোট করা আছে। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে শহীদুল হকের বিনিয়োগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, নথিপত্রগুলো গোপন রাখার শহীদুল হক তার এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান, সেই আত্মীয় আবার অপর এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান। এসব নথিপত্রে শহীদুল হকের বেআইনিভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। দুদক এসব যাচাই বাছাই করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।