সাবিবের কী হয়েছিল, অপেক্ষা ময়নাতদন্ত রিপোর্টের

মাদ্রাসা থেকে ছাত্রের লাশ উদ্ধার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ মার্চ, ২০২৩ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর মেহেদীবাগ এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সাবিব শাইয়ানের মৃত্যু মাদ্রাসার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশের কাছে আপাতত আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় পুলিশ। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা আজাদীকে বলেন, মাদ্রাসার ক্লাসরুমে সিসি ক্যামেরা ছিল। কর্তৃপক্ষ সেগুলো আমাদের দিয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, শিশুটি ৯টার আগে নিজে বাথরুমে প্রবেশ করে। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা ভেঙে তাকে বের করা হয়। তবে মূল কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করব।

দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিব শাইয়ান। সে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার মশিউর রহমান চৌধুরীর ছেলে। পরিবারের সঙ্গে নগরীর বাগমনিরাম পল্টন রোডে আব্দুল কাদের চৌধুরীর বাড়িতে থাকত। প্রতিদিন ভোরে দশ বছর বয়সী সাবিবকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসার পর রাতে ব্যবসায়িক কাজকর্ম শেষে ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন মশিউর। তিনি আজাদীকে বলেন, প্রতিদিন ছুটির পর মাদ্রাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকত সাবিব। আমি গেলে নিচে নেমে আসত। গতকাল (সোমবার) মাদ্রাসার ভবনের সামনে গিয়েও তাকে না দেখে নিচ থেকে ডাকাডাকি করি। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে এক হুজুরকে ফোন করি। তিনি তখন বলেন ছুটি তো হয়ে গেছে। এ সময় দুই ছাত্র নিচে এসে আমাকে জানায়, সাবিব ‘আত্মহত্যা’ করেছে।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মশিউর রহমান চৌধুরী এভাবে অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন। তিনি মর্গ থেকে তার ছেলের মরদেহ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় মেহেদীবাগে দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার টয়লেট থেকে সাবিবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাবিব কখন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল কিনা কিংবা মাদ্রাসায় যেতে আপত্তি করত কিনা জানতে চাইলে তার পিতা বলেন, ২০২০ সালের শেষ দিকে তার ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। প্রতিদিন সকালে স্বাভাবিকভাবেই সে আমার সাথে মাদ্রাসায় যেত। কখনও মারধর কিংবা অন্যকিছুর বিষয়ে অভিযোগ করেনি।

মশিউর বলেন, তার কী হয়েছিল কিছু বুঝতে পারছি না। পরিবারের কারোর সাথে তার কোনো মান অভিমানও ছিল না। বাসায় ফিরলে দুই ভাইবোন মিলে সারাক্ষণ দুষ্টুমি করত। মাঝেমধ্যে দুই ভাইবোনের ঝগড়া হলে বকাবকি করতাম। কিন্তু বকাবকির কিছুক্ষণ পর আবারো হাসিখুশি থাকত সে। মাকে জড়িয়ে ধরত। আমার এতটুকু ছেলে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, আমরা চমেক হাসপাতাল থেকে ছেলেটির মরদেহ উদ্ধার করি। এর আগে তাকে পরিবার ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের লোকজন হাসপাতালে এনেছিল। তিনি বলেন, ছেলেটির গলায় গোলাকার দাগ পাওয়া গেছে। মরদেহটি পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি জানান, এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া পর কোনো কিছু পাওয়া গেলে তখন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবিব সাইয়ানের মরদেহ শনাক্তকারী উপপরিদর্শক মো. শফিউল্লাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে মরদেহ পরীক্ষা, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাইবাছাই করে এখনো পর্যন্ত কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।

দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মোহাম্মদ ফোরকান মনজুর বলেন, আমাদের মাদ্রাসা প্রতিদিন রাত ৯টা ১০ মিনিটে ছুটি হয়। প্রতিদিন সাবিবের বাবা এসে তাকে নিয়ে যেত। সোমবারও যথারীতি তার বাবা তাকে নিতে আসে। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সাবিবের বাবা আমাকে ফোন দেয়। আমি কয়েকজন ছাত্রকে পাঠিয়ে সাবিবকে খুঁজতে বলি। সাবিব যে ক্লাসে পড়ত ওই হুজুরকে বিষয়টি জানাই। হুজুর জানান, রাত ৮টা ৪০ মিনিটে সাবিব টয়লেটে যাবে বলে ক্লাস থেকে বের হয়েছিল। টয়লেটে গিয়ে তাকে খুঁজলে দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে দরজাটি ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। পরে সাবিবকে প্যান্টের বেল্ট দিয়ে টয়লেটের একটি হুকের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। আমরা সাথে সাথে পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ম্যাঙ হাসপাতাল ও পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা পুলিশকে একই বিষয় জানিয়েছি। তারা আমাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। পরে ছেড়ে দেয়। তিনি জানান, ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর তিনি ঘর ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসাটি চালু করেন। তার পাঁচদিন পর ২৬ তারিখে সাবিব মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবাহ
পরবর্তী নিবন্ধবে-ক্রুজ জাহাজে চবি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ