সাপের ‘বন্ধু’ একজন শাওন

এলাকায় সাপ দেখলেই উদ্ধারে ডাক পড়ে তার

এসএম নাঈম উদ্দীন, বোয়ালখালী | মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমির হোসাইন শাওনের বাড়ি এবং বাড়ির আশেপাশে সাপ দেখা যেত। এলাকার মানুষ সাপ দেখলে মেরে ফেলত। একটি জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে মেরে ফেলতে দেখে শাওন তা মেনে নিতে পারেননি। সাপ কামড় দেয়; সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায়। তাই সাপ দেখলে মেরে ফেলতে হয়মানুষের মানসিকতাই এমন। এই মানসিকতা দূর করার জন্য গুগল, ইউটিউব ও ফেইসবুকে ভিডিও দেখতেন তিনি। এসব ভিডিও দেখে তার ইচ্ছে হয় সাপ উদ্ধার করে নিরাপদে তাদের আবাসস্থলে পৌঁছে দিতে। শাওনের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দনগর বড় পুকুরপাড় এলাকায়। এ বছর ওমরগনি এমইএস কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ অনার্স শেষ করেছেন। তিনি চিন্তা করলেন সাপ ধরা সহজ কাজ নয়। বিষধর সাপ ধরার কৌশল খুঁজতে খুঁজতে ২০২২ সালে ফেইসবুকে ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্ন্যাক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সন্ধান পান তিনি। এই গ্রুপের লার্নার ব্যাচে যুক্ত হয়ে সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত কোর্স করেন এবং সরাসরি প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমে সাপ উদ্ধার করার অনুমতি পান।

গতকাল সোমবার বিকালে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, শুরুতেই বাধা পড়ে পরিবারের। যেহেতু সাপ বিষাক্ত হয়, তাই পরিবার এ কাজে প্রথমে সম্মতি দেয়নি। পরে তাদের বুঝিয়ে বললে তারা সম্মতি দেয়। তিনি বলেন, বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়াসহ বেশ কিছু স্থান থেকে পদ্ম গোখরা, শঙ্খিনী, সবুজ বোড়া, মৃদু বিষধর সাপের মধ্যে মেটে (আন্ধা সাপ), নির্বিষ সাপের মধ্যে অজগর, ঘরগিন্নি (চরপোড়া), দাঁড়াশ, দুধরাজ, বেত আঁচড়া (উড়কোবাহা) এবং জলঢোরাসহ প্রায় ১শটি সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে তাদের আবাসস্থলে পৌঁছে দিয়েছি।

জীবনে প্রথম সাপ ধরার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদিন সকালে উপজেলার চরণদ্বীপ এলাকার মাইজপাড়ায় সাপ ধরতে যাই। মনে ভীতি কাজ করলেও তা এলাকাবাসীকে দেখাচ্ছিলাম না। সাপটি ছিল পদ্ম গোখরা। উদ্ধারের প্রথম দিকে গর্তে ঢুকে যায় সাপটি। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার ফলে সাড়ে ৮ হাত লম্বা সাপটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই। পরে সাপটিকে জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ে অবমুক্ত করি। এ কাজে রায়হান, মিনহাজ, মানিক, আরমান, জুবায়ের, আনছারসহ অনেকে সহযোগিতা করেন।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বোয়ালখালীসহ আশেপাশের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাপ দেখলেই ডাক পড়ে শাওনের। শাওন সাথে সাথে ছুটে যান। তবে এ কাজে তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না।

শাওন বলেন, আমাদের গ্রুপের উদ্দেশ্য হলো, বিপদগ্রস্ত সাপ ও বন্যপ্রাণীকে লোকালয় থেকে উদ্ধার করে তাদের উপযুক্ত স্থানে অবমুক্ত করা, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য অটুট থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় শীর্ষ ডাকাত আব্দুর রহিম গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধজরুরি ভিত্তিতে মিঠাছড়া খাল পুনঃখনন করা দরকার