সান্ত্বনার জয় ।। হোয়াইটওয়াশ এড়াল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১১ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নয় বছর পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম জয়। সে সাথে ওয়ানডে সিরিজও জয়। তবে জিম্বাবুয়ের সামনে সবচাইতে বড় যে সম্ভাবনাটি দেখা দিয়েছিল তা হচ্ছে ২১ বছর পর বাংলাদেশকে ওয়ানডে ক্রিকেটে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ। শেষ পর্যন্ত সে সম্ভাবনা আর আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করা স্বপ্ন পূরণ হয়নি জিম্বাবুয়ের। শেষ ম্যাচটি জিতে বাংলাদেশ অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়াতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের আসল চেহারাটি দেখাতে সক্ষম হয়েছে। যেটা আগে দেখাতে পারলে সিরিজের ফল ভিন্ন রকম হতে পারতো। ব্যাট-বলে গতকাল প্রতিপক্ষকে যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় এবং আফিফ হোসেনে ব্যাটিংয়ের পর বাংলাদেশের বোলারদের সম্মিলিত আক্রমণে জিম্বাবুয়েকে সিরিজের শেষ ম্যাচে ১০৫ রানে উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ফলে সিরিজ হারের ব্যবধান কমিয়েছে তামিম ইকবালের দল। বিজয়-আফিফের হাফ সেঞ্চুরিতে যে পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ সেটাকে দারুণ নির্ভরতা দিলেন এবাদত, মোস্তাফিজ, তাইজুল, মিরাজরা। আর তাতেই এলো স্বস্তির জয়। শেষ দিকে রিচার্ড এনগ্রাবা এবং ভিক্টর ন্‌িয়াউচি অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধ গড়ে না তুললে বাংলাদেশের জয়টা আরো বড় হতে পারতো। তারপরও শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে বাংলাদেশ।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা মন্দ করেনি। আগের দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম অবশ্য এই ম্যাচে পারলেন না আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি করতে। তারপরও দুই ওপেনার তামিম এবং বিজয় ৪১ রান যোগ করেছিলেন। ১৯ রান করা তামিম ফিরেছেন রান আউট হয়ে। এরপর চার বলের ব্যবধানে শান্ত এবং মুশফিক রানের খাতা খোলার আগে ফিরে এলে দারুণ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সে চাপ থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন এনামুল হক বিজয় এবং মাহমুদউল্লাহ। যোগ করেন ৭৭ রান। দারুণ খেলতে থাকা এনামুল ফিরেছেন ৭৬ রান করে। ৭১ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে এই রান করেন এনামুল। ৭১ বলে করেন ৭৬ রান। তিন বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরার সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় সত্তরোর্ধ্ব ইনিংস। এরপর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আফিফ। কিন্তু পারলেন না তিনি আফিফকে বেশিক্ষণ সময় দিতে। ৪৯ রান যোগ করেন দুজন। মাহমুদউল্লাহ ফিরেছেন ৩৯ রান করে। তার জন্য তিনি খেলেছেন ৬৯ বল। যা ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ দৃষ্টিকটু। এরপর বলতে গেলে আফিফ একাই দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। এক পাশে তখন উইকেট পড়েছে নিয়মিত। আরেকপাশে রান বাড়িয়েছেন আফিফ। ২ রানেই অবশ্য তিনি একটি সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের অনিয়মিত স্পিনার ইনোসেন্ট কাইয়াকে ফিরতি ক্যাচ দিলেও সেটা ধরতে পারেননি কাইয়া। সেই জীবন কাজে লাগান দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দারুণ সব শটের পসরা মেলে ধরে। ১৪ রানের ইনিংষ খেলে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন মিরাজ। এরপর একাই লড়ে গেছেন আফিফ। শেষ ১০ ওভারে ৬৭ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আফিফই করেন ৩১ বলে ৪৬ রান। শেষ পর্যন্ত ৮১ বলে ৬টি চার আর ২টি ছক্কার সাহায্যে ৮৫ রান করে অপরাজিত থাকেন আফিফ। আর তাতেই বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ২৫৬ রানে। অথচ বলা হচ্ছিল এই উইকেটটা ব্যাটিং এর জন্য দারুণ উপযোগী। আর সে উইকেটেই কিনা ২৫৬ রান করল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৩০৩, দ্বিতীয় ম্যাচে ২৯১ এর পর শেষ ম্যাচে পুঁজি ২৫৬।
২৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই স্বাগতিকদের ধাক্কা দেন পেসার হাসান মাহমুদ। ওপেনার কাইতানুকে ফেরান রানের খাতা খোলার আগেই। পরের ওভারে মিরাজের ধাক্কা। তিনি ফেরান আরেক ওপেনার মারুমানিকে। ৭ রানে দুই ওপেনার নেই। ওয়েসলি মাধবিরেকে যখন ফেরান অভিষিক্ত এবাদত হোসেন তখন জিম্বাবুয়ের রান ১৮। পরের বলেই আগের দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সেকান্দর রাজাকে ফেরান এবাদত। ১৮ রানে ৪ উইকেট নেই তখন স্বাগতিকদের। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইনোসেন্ট কাইয়াকে দাঁড়াতে দেননি তাইজুল। তার ঘুর্নিতে কাইয়া ফিরেন ১০ রান করে। উইকেট রক্ষক ক্লাইভ মাদান্দে চেষ্টা করেছিলেন প্রতিরোধ গড়ার। কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেননি মোস্তাফিজ। যদিও তার আগে টনি মুনিয়াঙ্গাকে ফেরান তাইজুল নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে। মাদান্দে এবং জংবি মিলে ২৮ রানের জুটি গড়েছিলেন। পরপর দুই ওভারে দুজনকে ফেরান মোস্তাফিজ। জংবি ফিরেন ১৫ রান করে আর মাদান্দে ফিরেন ২৪ রান করে। ৮৩ রানে ৯ উইকেট হারানো জিম্ববাুয়ের যখন শতরান পার করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল তখন আবার প্রতিরোধ গড়েন রিচার্ড এনগ্রাবা এবং ভিক্টর ন্‌িয়াউচি। এ দুজনের অপ্রত্যাশিত ৬৮ রানের জুটি জিম্বাবুয়ের স্কোর নিয়ে যায় ১৫১ রানে। এনগ্রাবা ২৭ বলে ৩৪ এবং নিয়াউচি ৩১ বলে করেন ২৬ রান। বাংলাদেশের পক্ষে মোস্তাফিজ ১৭ রানে নিয়েছে ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট এবাদত এবং তাইজুলের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় ১১ মামলায় সাড়ে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধখোলাবাজারে ডলারের দাম রেকর্ড ১১৯ টাকা