সাধারণ হয়ে থাকার মানসিকতাই এম এ মালেককে অসাধারণ করেছে

চিটাগাং উইম্যান চেম্বারের সংবর্ধনায় সিটি মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২২ মার্চ, ২০২২ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

চসিক মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ইতিহাস লিখতে গেলে আজাদীর কথা আসবে, আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের কথা আসবে। ইতিহাসের একটা লাইনে হলেও আজাদীর কথা আসতেই হবে। আমি-আপনি যদি বাদও দিই, ইতিহাসবিদেরা কখনো বাদ দিবে না। কারণ ইতিহাসবিদরা সত্য কথাটাই উদঘাটিত করে। সরকার তাঁকে কর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর হোটেল আগ্রাবাদে একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেককে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তিনি আরো বলেন, আমার এখনো মনে আছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তখন অস্ত্রশস্ত্র। জিপে করে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম, একজন হকার ‘আজাদী, আজাদী বলে চিৎকার করছিল। সেই সময় ওই জিপ থেকে একটা আজাদী কত পয়সা দিয়ে কিনেছি খেয়াল নেই, লাল কালিতে লেখা ছিল, জয় বাংলা, বাংলার জয়। আমরা এই পত্রিকা হাতে নিয়ে অসম্ভব উল্লাস করেছি। মেয়র বলেন, এম এ মালেক ভাই অত্যন্ত প্রাণবন্ত একজন মানুষ। সব সময় হাসিমুখে থাকেন। এত আন্তরিক মানুষ, এত বিনয়ী মানুষ আমাদের বর্তমান সমাজে বিরল। একটা কথা উনিও নিজেও বলেছেন-আমি ভিআইপি কিংবা সিআইপি আজকে আছি কালকে নাই। সাধারণ মানুষের সাথে আমাকে চলতে হয়। তাই আমি ভিআইপি-সিআইপির সুযোগ সুবিধা নিই না। এই যে উনার সাধারণ হয়ে বেঁচে থাকার মানসিকতা, তাঁকে একজন অসাধারণ ব্যক্তি করে তুলেছে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আপনারা জানেন একুশের সঙ্গে আমাদের পরিবার এবং আমাদের প্রেস ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কারণ একুশের প্রথম কবিতা কবি মাহবুবউল আলম চৌধুরীর লেখা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, সেই কবিতাটি আমাদের প্রেস থেকে ছাপা হয়েছিল। সেজন্য আমাদের ম্যানেজারকে জেলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু সুখের কিংবা দুঃখের বিষয় ছিল, সেই কবিতার প্রিন্টার্স লাইনে কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেস লেখা ছিল। সুতরাং এখানে কাউকে সাক্ষী দিতে হয়নি। যখন মামলা হলো, তখন আমাদের ম্যানেজার দবিরকে জেলে নিয়ে গেল পুলিশ। পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্ট সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।
তিনি আরো বলেন, একুশে পদক পাওয়ায় আমার অবশ্যই লাভ হয়েছে। কারণ যুগ যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে জাতীয় পতাকা দিয়েছেন, আমি মারা যাওয়ার পর আমার কফিনের উপর দেশের লাল-সবুজের পতাকা স্থান পাবে। এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা। জন্মেছি যখন মারা যেতে হবে। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর জন্য কেউ অত্যাবশ্যকীয় নন। যতদিন থাকব ততদিন ভালো কাজ করে যেতে হবে। একটি কথা আমি প্রায় সময় বলি-জীবনটা একটি নোটবুকের মতো। এটির প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠা লিখা হয়ে গেছে। মাঝের পাতাগুলো খালি। এখানে ভালো কিছু করলে ভালো তা পরবর্তীতে কল্যাণ নিয়ে আসবে। খারাপ করলে তার ফলও ভোগ করতে হবে।
চিটাগাং উইম্যান চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক লায়ন জেলা গভর্নর কামরুন মালেক বলেন, এই দু’ বছর করোনার কারণে আমাদের জীবনধারা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আপনারা জানেন, আমি লায়নিজমের সাথে জড়িত আছি। লায়ন হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সেবা সংগঠন। আল্লাহ আমাদের কিছুটা সৌভাগ্যবান করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাই আমি মনে করি যারা আমাদের থেকে কম সৌভাগ্যবান তাদের জন্য কিছু করে না যায়, তাহলে আল্লাহর কাছে আমাদের জবাব দিতে হবে। তাই আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা বলেন, এম এ মালেক সমাজের যতটুকু সেক্টরে অবদান রেখেছেন তত পদক আসলে দেয়া যাবে না। একজন এম এ মালেক তৈরিতে ভালো পরিবেশের প্রয়োজন। ভালো চট্টগ্রামের প্রয়োজন। যেখানে মানবিক মূল্যবোধ রয়েছে। তখন দেখবেন নতুন নতুন এম এ মালেক তৈরি হবে, কামরুন মালেক তৈরি হবে।
উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা বলেন, সাফল্য পেতে হলে পরিশ্রম করতে হয়। আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক একজন অনন্য গুণের অধিকারী। সমাজসেবায়, সাংবাদিতাসহ আরো অনেক জায়গায় কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন। সর্বোপরি উনি একজন মানবিক মানুষ। একুশে পদক পেয়ে তিনি সেটি চট্টগ্রামবাসীকে উৎসর্গ করেছে। তাঁর সাফল্যের পেছনে একজন মহিয়সী নারীর ভূমিকা রয়েছে। তিনি কামরুন মালেক ভাবী। তিনি এই উইম্যান চেম্বারের দুই বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। উনাকে আমি এই ৫০ বছর ধরে দেখছি।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য ও যুগ্ম সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, এম এ মালেকের এই পুরস্কারটা আরো অনেক আগে পাওয়ার দরকার ছিল। আজাদীর একটা স্বর্ণালী ইতিহাস আছে। তবে এটা ঠিক যে জীবদ্দশায় পাওয়াটা স্বীকৃতি আনন্দের।
বাচিক শিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় ও উইম্যান চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, মহাগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, লেডিস ক্লাবের সভাপতি খালেদা এ আউয়াল, দক্ষিণ আফ্রিকার অনারারী কনসাল সোলায়মান আলম শেঠ, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক আবু সাইদ, দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত, পিডিজি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচাললক মনজুর আলম মনজু, সমাজসেবক গোলাম মোস্তফা কাঞ্চন প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএখন ৩৬০ ফুট গভীর নলকূপেও পানি উঠে না কক্সবাজারে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬