সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে উদ্যোগী হতে হবে

| সোমবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সংস্কার খুব বড় স্বপ্ন, ঐক্য তার জন্য দরকার। নির্বাচনেও যেতে হবে কিন্তু তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।’ গত ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের সেদিন ছিল প্রথম দিন। সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সংস্কারমুখী মানুষকে আইনশৃঙ্খলা না দিয়ে, তার খাওয়ার ব্যবস্থা না করে, চাকরির নিশ্চয়তা না দিয়ে বিপথে নিয়ে যাবেন না। সর্বোত্তম পেতে গিয়ে আমরা যেন উত্তমকে হারিয়ে না ফেলি।’

তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া, নদীভাঙনের মধ্যে থাকা, আদিবাসী, দলিত সমপ্রদায়, নারীপুরুষের ভেতরে বিভেদ, ধর্মীয় চিন্তার ভেতরে বিভেদ, লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে বিভেদসেই মানুষগুলোর বেঁচে থাকা, কথা বলা, সমাবেশ করা, জীবিকা নির্বাহ করার অধিকার থাকবেসেই নিশ্চয়তা আমাদের পেতে হবে। সেই ঐক্যের বাংলাদেশ আমাদের গড়তে হবে। একটা ন্যূনতম জায়গায় আমাদের একমত হতে হবে।’ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এই আলোচনা শোনা যায় না যে গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন কত হবে, সে ন্যায্য মজুরি কীভাবে পাবে, কৃষক ফসলের দাম পাবে কি না, এই মুহূর্তে মধ্যবিত্ত ৮০ টাকায় শাকের আঁটি কেমন করে খাবে? সেই আলোচনা তো আসেনি। একবারও তো আলোচনা হলো না যুবসমাজের কর্মসংস্থান কেমন করে হবে। সেই সংস্কার কি আমরা দেখেছি। কীসের উপরিকাঠামো সংস্কার করবেন, যদি আমার ভিত ঠিক না থাকে। আসল ক্ষমতায়ন তো রুটিরুজির ক্ষমতায়ন।’

অন্যদিকে, একটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়াটা ভয়াবহ ব্যাপার হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি আশা করেছেন, রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে একমত হবেন। তাঁর মতে, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে যে আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে, সেটা অবশ্যই ভোটাধিকার ফেরত পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। সঙ্গে আরও দুটি আকাঙ্ক্ষা জোরালোভাবে নজর পেয়েছেইনসাফ (ন্যায়বিচার) ও মর্যাদার আকাঙ্ক্ষা।’

দুজনের বক্তব্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নির্বাচনে যাওয়ার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।’ আসলে বিদায়ী ২০২৪ সালে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বড় ভিলেন হলো নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যেমন দাম কমাতে পারেনি, তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও তাদের চার মাসের চেষ্টায় তেমন একটা সফল হয়নি। ফলে বছরজুড়ে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে দামের চাপে পিষ্ট হয়েছেন। মধ্যবিত্তের জীবনও কঠিন ও রূঢ় হয়ে গেছে। তাদের পাত থেকে খাবারের কিছু পদ কমেছে। নিত্যপণ্যের দাম পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুপারশপগুলো মধ্যবিত্ত গ্রাহক ধরে রাখতে ব্যবসায়িক কৌশল পাল্টেছে। মিনি প্যাক শ্যাম্পুর মতো গরুর মাংস, মাছ, মুরগি, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের কম্বো প্যাকেজ নিয়ে এসেছে, যা দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ ক্রেতাদের অসহায় আত্মসমর্পণের বার্তা দেয়। সরকার পরিবর্তন, তীব্র তাপপ্রবাহ, একাধিক বন্যা, পণ্য সরবরাহে ঘাটতি, আমদানি ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে বছরজুড়ে দেশে নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটাই অস্থিতিশীল ছিল। বিশেষ করে ফার্মের মুরগি ও ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চাল, সয়াবিন তেল এবং বিভিন্ন সবজির বাড়তি দামে ভোগান্তিতে ছিলেন নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা। নিত্যপণ্যের দাম ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে সরকার বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমায়। সরকারের এসব উদ্যোগে বছরের শেষ দিকে এসে কিছু পণ্যের দাম অবশ্য কমেছে। পাশাপাশি তিনটি সংস্থার মাধ্যমে খোলাবাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল, আটা, তেল, ডিম ও বিভিন্ন সবজি বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে সরকার। তবে চাহিদার তুলনায় এসব পণ্যের পরিমাণ ছিল অনেক কম। জিনিসপত্রের চড়া দামের কারণে পুরো বছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। একপর্যায়ে তা দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়ে যায়। বিশেষ করে দেশে গত ১১ মাসের মধ্যে আট মাসেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চলতি বছর লম্বা সময় ধরে উচ্চ মূল্যে স্থির ছিল আলু ও পেঁয়াজের দাম। পণ্য দুটির উৎপাদন ও মজুত পর্যাপ্ত থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দাম কমেনি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘গত এক বছরে জিনিসপত্রের দাম এত বেশি ছিল যে ধারদেনা করেও জীবন চালানো কঠিন হয়ে গেছে।’ তাই সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে উদ্যোগী হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে