সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের সুযোগ যেন কেউ না পায়

| শুক্রবার , ২৬ আগস্ট, ২০২২ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

অবৈধ বসতি উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় দেওয়ার দাবিতে দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের কতিপয় বাসিন্দা। তারা ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে মহাসড়ক স্থবির করে দিয়ে যে নৈরাজ্য প্রদর্শন করেছে, তা এক কথায় অমানবিক। দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে রাখায় হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। জানা যায়, বহু অসুস্থ মানুষ রাস্তায় আটকা পড়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। এসব অনাচার কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। জোর করে বসতি স্থাপনও সম্ভব নয়। তারপরও যদি প্রকৃত ভূমিহীন থাকে, তাদের পুনর্বাসন করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানানো যায়, কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা যায় না।
দৈনিক আজাদীতে ২৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়কের বিআইটিআইডি হাসপাতালে গেট এলাকায় গত ২৩ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে অবরোধ করে। মহাসড়কে অবরোধের ফলে রাস্তার উভয় পাশে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট হয়। যানজটে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত পরিবহনের যাত্রীরা। অবরোধ চলাকালে আলীনগর ও জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবরোধকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে অবরোধকারীরা জঙ্গল সলিমপুরের দিকে পালিয়ে যায়। এর পরপরই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে যান চলাচল শুরু হয়।’
কথা হচ্ছে, প্রশাসন অ্যাকশনে যেতে এতো দেরি করলো কেন? অবরোধকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তারা যখন বুঝলো না, তখনই অ্যাকশনে যাওয়া উচিত ছিল মহাসড়ক উন্মুক্ত রাখার খাতিরে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করাকে বিলম্বিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক দেরিতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে অবরোধকারীরা জঙ্গল সলিমপুরের দিকে পালিয়ে গেল। এতোটা সময় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কেবল প্রশাসনের জন্যই হলো।
আজাদীতে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার মজুমদারের মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, দাবি আদায়ের এই কৌশল মেনে নেয়া যায় না। এটা অপকৌশল, নৈরাজ্যকর। নৈরাজ্যকর কোনো পরিস্থিতি কোনোদিনই সুফল আনতে পারে না। জঙ্গল সলিমপুরের সরকারি খাস জায়গায় দিনের পর দিন বসতি গড়ে ওঠার পেছনে যারা জড়িত তাদেরকেও চিহ্নিত করতে হবে। এখানে সংঘবদ্ধ কোনো চক্র জড়িত আছে কিনা, সরকারি ভূমি গ্রাস করার জন্য কোনো ভূমিদস্যু জড়িত কিনা, পাহাড়ের ভিতরে গড়ে ওঠা বসতিতে বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগ কারা কিভাবে দিল, সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। একটি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে শত শত অন্যায়ের সৃষ্টি হয়। জঙ্গল সলিমপুরে অনেক অন্যায় হয়েছে। এসব অন্যায় অংকুরে শেষ করে দিলে আজকের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখতে হতো না।
আজাদীতে প্রকাশিত অন্য একটি সংবাদে অবৈধ বসাবাসকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, সলিমপুরের ভূমিদস্যু, পাহাড়খেকো ও সন্ত্রাসীদের অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে। সেখানে প্রকৃত ভূমিহীন মোট ২ হাজার ৭০০। পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু নিজ জেলায় জমি আছে, আবার এখানে বাড়ি করেছে, তাদের বিষয়ে কমেপ্রামাইজ করা সম্ভব না। মহাসড়ক অবরোধ করে যারা ভাঙচুর ও জনভোগান্তি সৃষ্টি করেছে, তাদের অধিকাংশ ‘জামাত-বিএনপির লোকজন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা এসব করেছে, সব তথ্য আছে। সড়কে প্রতিবন্ধকতা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাদান, জানমালের ক্ষতিসাধন করা এসবই অপরাধ। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমরা চাইবো, প্রশাসন কেবল মুখে নয়, প্রকৃতঅর্থে কঠোর ভূমিকা পালন করুক। এদের কঠোর হস্তে দমন করা না গেলে ওরা বারবার এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে দ্বিধাহীন চিত্তে। এতে অন্য সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়বে অসুস্থ রোগী ও নারী-শিশু যাত্রীরা। সেইদিন যেমন পড়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের সুযোগ যেন কেউ না পায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধখ্রি পূ. ৫৫ জুলিয়াস সিজার ব্রিটেনে পদার্পণ করেন।