মোহামেডান মানে একটি আবেগের নাম। মোহামেডানের সাদা-কালো জার্সিটাই লক্ষ মানুষের সমর্থন কেড়ে নিয়েছে যুগ যুগ ধরে। চট্টগ্রামেও একসময় সেই মোহামেডানের দাপট ছিল। সদরঘাটের সেই ক্লাব ঘরটি কখনো আনন্দ আবার কখনো হতাশার সাক্ষী হয়ে থাকতো। মোহামেডানের দলের ঘোড়া যেদিকে ছুটেছে সেদিকে ক্রমশ লম্বা হয়েছে মানুষের লাইন। গড় প্রায় দেড় দশক ধরে চট্টগ্রামের ফুটবলে নেই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। একসময় জাতীয় লিগ এবং বি লিগ খেলা চট্টগ্রাম মোহামেডান আর ফুটবলে নেই। মোহামেডানের দ্বিতীয় দল মোহামেডান ব্লুজ এখনো চট্টগ্রামের ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করছে। হোকনা মোহামেডান ব্লুজ। জার্সিটাতো সাদা-কালো। তাই হাজারো মানুষের আবেগ এখন পাগলা গোড়ার মত ছুটছে মোহামেডান ব্লুজের পেছনে। গত কয় বছর আগেও বেশ দাপট মোহামেডান ব্লুজের চট্টগ্রামের ফুটবলে। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই যেন জৌলুস হারিয়ে ফেলছে মোহামেডান ব্লুজ। কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে সাদা-কালো জার্সিটা। এখন আর তেমন ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে পারছেনা। তাই হাতে গোনা কিছু সমর্থক যারা এখনো আবেগের টানে মাঠে ছুটে আসেন মোহামেডান ব্লুজের খেলা দেখতে তাদের ফিরতে হয় একরাশ হতাশা আর অপ্রাপ্তির বেদনা নিয়ে। প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে যান এ কোন মোহামেডান। এ কেমন মোহামেডান।
দেশের ফুটবল যেখানে হারাচ্ছে তার রূপ রং সেখানে চট্টগ্রামের ফুটবল আর কিইবা দিতে পারবে। তারপও ফুটবলতো বাঙ্গালীর প্রানের খেলা। তাইতো এখনো চট্টগ্রামের মানুষ ফুটবল হচ্ছে শুনলে একটু হলেও মাঠে ঢু মেরে যায়। আর মোহামেডান হলেতো কথাই নেই। কিন্তু এখনকার মোহামেডান দেখেতো তারা অবাক। হতাশ। গতকাল চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগে মোহামেডান ব্লুজ তাদের প্রথম ম্যাচটা খেলতে নেমেছিল মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচেই ৩-০ গোলে হেরেছে মোহামেডান ব্লুজ। খেলায় হার জিত থাকতেই পারে। আজ জিতবে কাল হারবে সেটাইতো নিয়ম। তাই বলে হতশ্রী পরাজয়। খেলার ফলাফল অনুযায়ী উদয়নের জয়টা ৩-০ গোলের। কিন্তু সেটা হতে পারতো আরো বড়। মাঠে কেবলই সাদা-কালো জার্সিটা দেখা গেছে। আর সেটা দেখেই বুঝে নিতে হয়েছে মোহামেডান ব্লুজ খেলছে।
এখন আর ফুটবল মাঠে দর্শক আসেনা। তারপরও গতকাল যারা প্রানের টানে মাঠে এসেছিল তাদের মত হতাশায় পুড়েছেন মোহামেডানের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীমও। খেলা দেখতে দেখতে তিনি বলছিলেন এরা কেমন ফুটবলার। কি ফুটবল খেলছে। কোন ধরনের পজিশন জ্ঞানটা পর্যন্ত নেই। কার কি দায়িত্ব সেটাওতো বুঝতে পারছেনা তারা। এবারে লিগের প্রথম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাছে হেরেছে শতদর ক্লাব। কিন্তু হেরেও বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে দলটি। কিন্তু মোহামেডান ব্লুজ ? প্রতিপক্ষ দলেল খেলোয়াড়দের আক্রমন সামাল দেবেতো দুরের কথা পেছনে পেছনে দৌড়াতেও পারছিলনা সমান তালে।
গত কয় বছর ধরে শিরোপা নেই ক্লাবটির। তার উপর গত বছর ব্রাদার্সের মত দলের কাছে ৫ গোল হজম করার রেকর্ডও গড়েছিল মোহামেডান ব্লুজ। বলা হচ্ছিল সবার আগে অনুশীলনে নেমেছিল মোহামেডান ব্লুজ। সবচাইতে বেশি সময় অনুশীলনও করেছে। কিন্তু মাঠে তার প্রতিফলনের ঠিটেফোটাও দেখা গেলনা। ফুটবলারদের দেখে মনে হলো তাদেরকে যেন জোর করে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পরিনতি যা হওয়ার তাই হলো। যদিও কেবলই ফুটবল লিগ শুরু। সময় এখনো অনেক বাকি। কিন্তু শুরুর ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠাও বেশ কঠিন কাজ। সেটা এখন কতটা কাটিয়ে উঠতে পারে মোহামেডান ব্লুজ সেটাই দেখার বিষয়। কবে আবার সাদা-কালো জার্সি ঔজ্জ্বল্য ছড়াবে কে জানে?